পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির দরগা-কূটনীতির ফলে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। এই আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে চাইছে নয়াদিল্লি। আগামী দু’মাস ভারত-পাকিস্তান আলোচনা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর জুলাইয়ে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ ইসলামাবাদ সফরে যাবেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই সফরেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বহু প্রতীক্ষিত পাকিস্তান যাত্রার দিনক্ষণ স্থির হবে।
পুরো বিষয়টি যেন মাঝপথেই ভেস্তে না যায় সে জন্য দু’পক্ষই আপাতত পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ করবে বলে স্থির হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আজ কুড়ি বছর ভারতীয় জেলে বন্দি অশীতিপর পাক বিজ্ঞানী মহম্মদ খলিল চিস্তির জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯২ সালে অজমেরে এক খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর। ঘটনাচক্রে, গত কালই ভারত সফররত পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিকের সঙ্গে চিস্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। চিদম্বরম তাঁকে জানান, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজকের শুনানিতেও সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। বেঞ্চের বক্তব্য, “আমাদের আশা দু’দেশের সম্পর্কের এই সৌহার্দ্য বজায় থাকবে।” আদালত জানিয়েছে, খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কুড়ি বছর ধরে ভারতে রয়েছেন চিস্তি।
|
পাক বিজ্ঞানী মহম্মদ
খলিল চিস্তি।-ফাইল চিত্র |
বয়স এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হল।
জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে অনুরোধ করেন, মানবিকতার খাতিরে মুক্তি দেওয়া হোক চিস্তিকে। এর পরই তৎপরতা শুরু হয় সরকারি শিবিরে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত চিস্তির মুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে রাজ্যপাল শিবরাজ পাটিল আইনি জটিলতার কারণে সেই আবেদনে সম্মতি দেননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত আটকেই ছিল। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে সেই বাধা কাটল। পাক সরকারও এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ।
সর্বোচ্চ আদলতের রায়ে পাকিস্তানে চিস্তির পরিবারে খুশির হাওয়া। গত ডিসেম্বরে ভারতে এসে চিস্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁরা। পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ভারত সফরের আগে চিস্তির দুই মেয়ে সোহা ও আমনা চিঠি লিখে তাঁকে অনুরোধ করেন, বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে। রায় শুনে দৃশ্যতই আবেগপ্রবণ সোহা বললেন, “সবই আল্লার দয়া। সব ভারতীয় এবং পাকিস্তানিদের ধন্যবাদ।” খুশি পাকিস্তানের সমাজকর্মী আনসার বার্নি-ও। তাঁর কথায়, “শিগ্গিরই চিস্তিকে ফেরানোর জন্য ভারতে যাব।”
কূটনৈতিক শিবির মনে করছে, চিন মডেল অনুসরণ করে দ্বিপাক্ষিক বিরোধের জায়গাগুলিকে সরিয়ে রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কের অগ্রগতি ঘটানো সম্ভব। আগামী মাসে ইসলামাবাদে বসছে দু’দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে ভারত-পাকিস্তান ভিসা আইন শিথিল করা সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে। এছাড়াও আলোচনা হবে সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে। এর পর স্যার ক্রিক, তুলবুল নিয়ে দু’দেশের কর্তাদের বৈঠক হবে দিল্লিতে। শেষে বৈঠকে বসবেন দু’দেশের বিদেশসচিব। সেই বৈঠকে কৃষ্ণর ইসলামাবাদ যাওয়ার দিন স্থির হবে। |