ব্লক থেকে বড় রাস্তায় যাওয়ার পথেই রয়েছে নজরদারির একাধিক ‘বলয়’। প্রতিটি থানা এলাকার ব্লকে ব্লকে তিন শিফ্টে টহল দেওয়ার কথা শতাধিক গ্রিন পুলিশের। তাঁদেরও উপরে টহলদারি ভ্যান, ‘হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড’ ইত্যাদি। কমিশনারেট চালুর পর থেকে খাতায়-কলমে এটাই বিধাননগরের পুলিশি নিরাপত্তা। তবু ‘আসল’ নজরদারি যে সেই তিমিরেই, তা স্পষ্ট হয়ে গেল রবিবার রাতের এক ঘটনায়। যে ঘটনায় অভিযোগ, ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে এক ব্যক্তির পায়ে কাটারির কোপ মেরে পালায় দুই দুষ্কৃতী। তার আগে একটি সোনার হার ও নগদ দু’হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ঘটনার সময়ে ধারেকাছে কোনও ‘টহলদারের’ দেখা মেলেনি।
পুলিশের দাবি, আগের থেকে অপরাধ কমেছে বিধাননগরে। অথচ পুলিশেরই সূত্র বলছে, পুজোর পর থেকে কখনও তিন নম্বর সেক্টরে শপিং মলের কাছে, কখনও কোনও ব্লকে, কখনও কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে। যার সাম্প্রতিকতমটি হল, সিএ ব্লকের বাসিন্দা মনুজেশ মুখোপাধ্যায়ের ঘটনা। রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিদ্যাসাগর আইল্যান্ড থেকে ডিএ ব্লকের একটি গলি দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন পেশায় সাংবাদিক মনুজেশবাবু। গলিতে ঢোকার মুখেই তাঁর পিছনে থামে একটি মোটরবাইক। চালক বসে থাকে, পিছনে বসা লোকটি নেমে কাটারি দেখিয়ে মনুজেশবাবুর গলার হার ও মানিব্যাগ থেকে নগদ দু’হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর পরেও ছিনতাইকারী তাঁর আংটি খুলতে গেলে প্রতিবাদ করেন মনুজেশবাবু। তখন তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর নীচে কোপ বসায় ওই দুষ্কৃতী। কোনও মতে নিজেকে ছাড়িয়ে বিদ্যাসাগর আইল্যান্ডের কাছে চলে যান মনুজেশবাবু। পিছনে যায় দুষ্কৃতীরাও। তবে মনুজেশবাবু চিৎকার করতে করতে রাস্তা পেরিয়ে উল্টো দিকে চলে যেতে হাল ছেড়ে দিয়ে পালায় তারা। ওই অবস্থাতেও একটি ট্যাক্সি ধরে দুষ্কৃতীদের কিছু দূর ধাওয়া করেছিলেন মনুজেশবাবু। পরে তিনি বলেন, “বাইকের নম্বর প্লেটে কোনও নম্বর ছিল না। এত রক্ত বেরোচ্ছিল যে, বেশি দূর ধাওয়া করতে পারিনি।”
ওই মোড়েই সাধারণত একটি টহলদারি ভ্যান থাকে। রবিবার সেটি ছিল না বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি শপিং মলে গোলমালের খবর পেয়ে সেখানেই গিয়েছিল টহলদারি গাড়িটি। মনুজেশবাবু যেখানে আক্রান্ত হন, ওই গলিতেই ক ’বছর আগে ডাকাতদের গুলিতে মারা যান এক দোকানমালিক। এত নজরদারির বন্দোবস্ত সত্ত্বেও কী ভাবে দাপাচ্ছে দুষ্কৃতীরা? বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “অপরাধ আগের থেকে কমেছে। কিন্তু এটা খুবই খারাপ ঘটনা। নজরদারি আরও মজবুত করা ও অপরাধী ধরায় জোর দেওয়া হবে।” বাসিন্দাদের সংগঠন ‘সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রইল। ব্লকের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ যথাযথ না করলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।” |