কালবৈশাখীর ধাক্কায় হোর্ডিং বিপর্যয় টলিউডে
কালবৈশাখীর দাপটে বিধ্বস্ত টলিউড। এপ্রিলের শুরুতেই একের পর এক কালবৈশাখী আছড়ে পড়েছে এ রাজ্যে। তাতে রাজ্যবাসী গুমোট গরম থেকে খানিকটা স্বস্তি পেলেও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যারপরনাই অস্বস্তিতে।
গত সপ্তাহের তিন তিনটে কালবৈশাখীতে উড়ে গিয়েছে অসংখ্য বাংলা ছবির ফ্লেক্স-হোর্ডিং। উল্টোডাঙা থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউ। ই এম বাইপাস থেকে হাওড়া। ছবিটা সর্বত্রই এক। বাংলা ছবির প্রায় ৯০ শতাংশ হোর্ডিং তছনছ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ইতিমধ্যেই ৫০ লাখ টাকা ছুঁয়েছে বলে দাবি প্রযোজকদের।
প্রথম কালবৈশাখীর দাপটে শহর আর শহরতলি মিলিয়ে ‘ভূতের ভবিষ্যতে’র ২৫টি এবং ‘আবার ব্যোমকেশে’র ১০টি ফ্লেক্স নষ্ট হয়েছে। ‘ল্যাপটপ’ নামে একটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী শুক্রবার। অর্থাৎ নববর্ষের ঠিক আগে। এর মধ্যেই সেই ছবির কমপক্ষে ৮০টি হোর্ডিং তছনছ হয়ে গিয়েছে।
“এই শুক্রবার ‘ল্যাপটপ’ মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই প্রায় সব হোর্ডিং নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন হোর্ডিং তৈরির জন্য আমরা দিন-রাত এক করে কাজ করছি,” বললেন ছবির পরিচালক। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট বা মাঝারি বাজেটের ছবির প্রায় ৩০টি হোর্ডিং। “বাংলা ছবির জন্য ক্ষতিটা বিশাল। প্রচারের খরচ থেকে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হওয়া মানে প্রযোজকদের পক্ষে সত্যিই বড় ধাক্কা,” বললেন ‘আবার ব্যোমকেশে’র প্রযোজক।
নববর্ষেই মুক্তি পাচ্ছে ‘লে হালুয়া লে’। কিন্তু ক্ষতির আঁচ তেমনটা পড়েনি এই ছবির প্রচারের ক্ষেত্রে। কারণ, শহর জুড়ে এই ছবির শুধু পোস্টার দেওয়া হয়েছে। হোর্ডিং না লাগানোয় বড় লোকসানের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে তারা।
ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডালহৌসি আর এসপ্ল্যানেড চত্বর যখন থেকে ‘হোর্ডিং ফ্রি জোন’ ঘোষিত হয়েছে, সমস্যা বেড়েছে তখন থেকেই। এই চত্বরে হোর্ডিং লাগিয়ে ছবির প্রচারের ব্যবস্থা বন্ধ বেশ কিছু দিন ধরে। সে জন্য শহরের অন্যত্র হোর্ডিংয়ের দর বেড়েছে চড়চড়িয়ে। আর সেই চড়া দামে লাগানো হোর্ডিং ঝড়ে ছিঁড়ে পড়লে বিশাল লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রযোজকদের।
ঝড়ে লন্ডভন্ড হোর্ডিং। ছবি: সুদীপ আচার্য
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার অবশ্য জানান, ভারতের অন্য বড় শহরের তুলনায় কলকাতায় হোর্ডিংয়ের দর অনেকই কম। কিন্তু ঝড়ের লোকসান প্রযোজকরা সামলাবেন কী করে?
মেয়র পারিষদের বক্তব্য, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে হোর্ডিংয়ের ক্ষতি হলে তার দায় তো আর পুরসভার নয়।”
এ সবের মধ্যেই আর একটা প্রশ্ন উঠছে। তা হল, আজকের এই প্রচার সর্বস্ব দুনিয়ায় হোর্ডিংয়ের আদৌ কি কোনও গুরুত্ব আছে? ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনি বলছেন, আছে। “রাস্তাঘাটে মানুষের চোখ টানতে এখনও হোর্ডিংয়ের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশেষ করে কলকাতার মতো শহর, যেখানে এত ঘন ঘন ট্র্যাফিকে আটকাতে হয়, সেখানে হোর্ডিং ছবির প্রচারের একটা বড় মাধ্যম তো বটেই। কারণ, সিগন্যালে আটকে থাকা অবস্থায় বাস বা গাড়িতে বসে আমরা শুধুমাত্র ওই হোর্ডিংগুলোই দেখি।” বললেন মহেন্দ্র।
এখানেই শেষ নয়। ‘আবার ব্যোমকেশে’র প্রযোজক জানালেন, কলকাতা পুরসভা কয়েক মাস আগে একটি সার্কুলার জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, শহরের রাস্তার দেওয়ালে ছবির পোস্টার লাগানো যাবে না। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেওয়ালে দেওয়ালে ছবির পোস্টার এখনও পড়ে। ওই প্রযোজকের কথায়, “ঘরের বাইরে ছবির প্রচারে হোর্ডিং তাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।” নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেওয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে কী বলছে পুরসভা? মেয়র পারিষদ বললেন, “এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখব।”
সেলুলয়েডে ঝড়-বৃষ্টি যতই নাটকীয় হোক না কেন, বাস্তবে তা-ই এখন কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টলিউডের কাছে। কারণ হোর্ডিং বিপর্যয়ের বিশাল মাসুল গুনতে হচ্ছে প্রযোজকদের। আর কালবৈশাখীর সৌজন্যে বাংলা ছবির প্রচার যেন এখন ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.