দলের এক অংশের নেতাদের এড়িয়ে সরকারি কর্মীদের সভা ডাকলেন তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কাল, বুধবার ভারত সভা হলে ওই সভা হবে। সোমবার মহাকরণে পোস্টারও পড়েছে ওই সভাকে সফল করার ডাক দিয়ে। রাজ্যের তিন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, অরূপ রায়, মলয় ঘটকের নাম সভায় আমন্ত্রিতদের তালিকায় থাকলেও, নেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু বসু বা দোলা সেনের নাম।
১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের শ্রমিক ও কর্মী সংগঠনের দায়িত্ব শোভনবাবুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১০-এ শোভনবাবুকে সরিয়ে শ্রমিক সংগঠনের মূল দায়িত্ব পূর্ণেন্দু বসুকে দেন তৃণমূল নেত্রী। পরে পূর্ণেন্দুবাবু মন্ত্রী হওয়ায়, তাঁর সুপারিশে রাজ্য-সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় দোলা সেন-কে। শোভনদেববাবুকে প্রাথমিক ভাবে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি করা হলেও, পরে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্যের অপর এক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।
এখানেই না থেমে তৃণমূলের সরকারি কর্মীদের সংগঠন থেকেও শোভনবাবুকে কার্যত সরিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে এত দিন তাঁর নেতৃত্বেই চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৩০ মার্চ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়ে দেন, দল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কোনও কর্মী সংগঠন রাখতে চায় না। এর পরিবর্তে তৈরি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবন্ধু সমিতি। যার সভানেত্রী হচ্ছেন দোলা সেন।
এই অবস্থায় শোভনদেববাবু তাঁর অনুগামীদের মাধ্যমে সরকারি
কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর দাবি, “দলে নতুন কর্মী-সংগঠন তৈরি হলেও মুখ্যমন্ত্রী আগের মতোই সংগঠনের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।” ভারত সভা হলের বৈঠক সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, “ওটা ডেকেছেন মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীনেতা বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন।”
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু বসু এবং দোলা সেন-কে সভায় আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “পার্থ খুব ব্যস্ত। পূর্ণেন্দুবাবু ও দোলাদেবী দলের এই আদি কর্মী-সংগঠনকে পঙ্গু করে অন্য একটি সংগঠনকে শক্ত করার চেষ্টা করছেন। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।”
মহাকরণের পোস্টারে সভার উদ্যোক্তা হিসাবে ‘ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’-এর নাম লেখা থাকলেও, জানানো হয়েছে সেটি পূর্বতন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত। কেন? বিশ্বজিৎবাবুর ব্যাখ্যা, “দলের জন্মলগ্ন থেকে আমরা সক্রিয় কর্মী। বাম আমলে নির্যাতিত হয়েছি নানা ভাবে। এখন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে যে সব বড় বড় নাম প্রচারমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা বেনোজল।”
এ ব্যাপারে পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, “এ রকম সভার কথা আমি জানি না। অন্তত আমার সঙ্গে ওই সভার কোনও সম্পর্ক নেই।” কর্মীসভা নিয়ে বিতর্কের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছেন আমন্ত্রিত মন্ত্রীরা। সভায় আসতে কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবুকে অনুরোধ করেছেন শোভনদেববাবু। রবিবার সিঙ্গুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়েও কৃষিমন্ত্রীকে আসার অনুরোধ জানান শোভনদেববাবু। এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, এ নিয়ে কোনও বিতর্ক চান না। মলয় ঘটক বলেন, “আমি তো আমন্ত্রণপত্রই পাইনি।” আর অরূপ রায়ের কথায়, “আমি কোনও বিতর্কে থাকতে চাই না। দল অনুমতি দিলে তবেই যাব।” |