তিনটি ট্রাম বেচে দেড় কোটি টাকা পাবে অথার্ভাবে রুগ্ণ কলকাতা ট্রাম সংস্থা। এই প্রথম ট্রাম বিক্রির অনুমতি পেয়েছে তারা। ক্রেতা পঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়াও, দু’টি ট্রাম নেবে কেএমডিএ, দু’টি নেবে পর্যটন দফতর। সিটিসি-র এক পদস্থ অফিসার জানান, ওই চারটি ট্রামের বিনিময়ে কত টাকা মিলবে বা কী শর্তে সেগুলি দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
অর্থাভাবে সিটিসি-র কর্মীদের বেতন দেওয়া দুষ্কর হয়ে উঠছে। নানা কারণে বিভিন্ন রুটের ট্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুমটিতে পড়ে আছে প্রায় দেড়শো ট্রাম। এই অবস্থায় হেরিটেজ বা পরিবেশ-বান্ধব দ্রষ্টব্য হিসেবে ট্রাম বিক্রি করা গেলে সংস্থার অর্থসঙ্কট অনেকটাই কাটবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা।
কলকাতা থেকে ট্রাম পঞ্জাবে পাঠানোর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি মিলেছে।
ট্রাম চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছিল পঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতার এই পরিবেশ-বান্ধব যান তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিখরচায় চালাতে চায় পড়ুয়াদের যাতায়াতের জন্য। কিছু দিন আগে বিকাশ কান্ত, লোকেশ লামানিয়া, শুভেন্দু আচার্য এবং রাহুল জৈন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চার ছাত্রকে নিয়ে কলকাতায় আসেন সেখানকার ডিন চিন্ময় সরকার। রবিবার তাঁরা ফিরে যান। ইতিমধ্যে চিন্ময়বাবু ট্রাম নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন পরিবহণ দফতরের পদস্থ কিছু অফিসার এবং সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈনের সঙ্গে। |
সোমবার পঞ্জাব থেকে চিন্ময়বাবু বলেন, “এটা মূলত ছাত্রদের আগ্রহেই হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ-পঞ্জাবের সৌহার্দ্য, ট্রামের হেরিটেজ, পরিবেশ-ভাবনা প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে এখানকার তিনটি ট্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” ওই তিনটি ট্রাম চলবে ৪.২ কিলোমিটার চক্রপথে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। শান্তিলালবাবু বলেন, “ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২০ হাজার আবাসিক। আমরা ওঁদের বলেছি, এ ব্যাপারে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতিপত্র নিতে।” পঞ্জাবে ফাগোয়ারা এবং জলন্ধরের মাঝে ৬৪০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে ওই ‘লাভলি প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০০৫ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মযার্দা পায়।
প্রতিটি ট্রামের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা করে অর্থাৎ মোট দেড় কোটি টাকা পঞ্জাবের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ট্রাম-বাবদ পাবে সিটিসি। চিন্ময়বাবু বলেন, “আশা করছি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে আগামী সপ্তাহেই সম্মতিপত্র আসবে। এর পরে দু’সপ্তাহ সময় লাগবে ট্রাম পেতে।” সিটিসি-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “আমাদের প্রচুর অচল ট্রাম পড়ে আছে। ট্রাম বরাদ্দ করতে অসুবিধা হবে না।”
এ দিকে, দু ’টি অচল ট্রাম দক্ষিণ কলকাতায় পাটুলির সত্যজিৎ পার্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিটিসি-র কর্তারা। এ ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি মিলেছে। কথা হয়েছে, ১৯৩০ সালে তৈরি দু’টি পরিত্যক্ত ট্রাম বরাদ্দ হবে কেএমডিএ-র ওই পার্কের জন্য। ট্রাম দু’টি সেখানে ব্যবহৃত হবে রেস্তোরাঁ হিসেবে। এ ছাড়া, দু’টি ট্রাম বরাদ্দ হচ্ছে এসি ক্যাফেটেরিয়া হিসেবে। সেই দু’টি চালাবে পর্যটন দফতর। সিটিসি-র চেয়ারম্যান জানান, এই চারটি ট্রামের জন্য কত টাকা মিলবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে, কয়েক মাসের মধ্যেই কলকাতায় যাত্রীদের জন্য এসি ট্রাম চালু হবে। |