ভাড়া না বাড়িয়েও অটো-সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে সোমবার জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার এ বার নিজস্ব পেট্রোল পাম্প খুলতে চলেছে। কলকাতায় সিএসটিসি-র যে সমস্ত ডিপো আছে, সেখানেই পাম্পগুলি খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি পাম্পের তুলনায় কিছুটা সস্তায় এলপিজি সরবরাহ করার সম্ভাবনা আছে সরকারি পাম্প থেকে। কী ভাবে তা সম্ভব? রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেন, “অটো চালক থেকে শুরু করে বেসরকারি গাড়ির চালক এবং সরকারি পরিবহণ কর্মীদের সমস্যা দূর করতেই সরকার পাম্প খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ভাড়া না-বাড়ানোর দলীয় নীতি আঁকড়ে ধরতে গিয়ে অটো-সমস্যা নিয়ে কার্যত ‘অন্ধগলি’তেই আটকে রয়েছে রাজ্যের তৃণমূল-শাসিত সরকার। পেট্রোল পাম্প চালু করার সিদ্ধান্তে সমস্যা কিছুটা মিটবে বলেই মনে করেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি তুষার সেন। তিনি এদিন বলেন, “নিজস্ব পাম্প হলে সরকার সস্তায় এলপিজি বা জ্বালানি বিক্রি করতে পারে ফলে যে এলপিজি ৫৩ টাকা ৬ পয়সা দরে বেসরকারি পাম্প থেকে বিক্রি করা হচ্ছে, তা অপেক্ষাকৃত কম দামে সরকারি পাম্প থেকে বিক্রি হতেই পারে।” বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তুষারবাবু জানান, তেল কোম্পানি থেকে লিটার প্রতি কমিশন হিসাবে তাঁরা পান ৬৯ পয়সা। তা থেকে পাঁচ পয়সা করে অবশ্য ‘লাইসেন্স-ফি’ কাটা হয়। রাজ্য সরকার সেই কমিশনটা ‘ছাড়’ হিসাবে দিতে পারে। ফলে সরকারি পাম্প থেকে এলপিজি বা জ্বালানির দাম কমিয়ে বিক্রি করা হতে পারে। তুষারবাবুর আরও বক্তব্য, “আমরা ডিলাররা তেল বা জ্বালানি বিক্রি করি লিটার হিসাবে। কিন্তু আমাদের কমিশন দেওয়া হয় প্রতি টন হিসাবে। তেল কোম্পানি তাদের ডিলারদের টন প্রতি ১২০০ টাকা করে কমিশন দেয়।’’ তুষারবাবুর মতে, ওই কমিশনের কিছুটা অংশ পাম্পের আনুষঙ্গিক খরচের (রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতন ইত্যাদি) জন্য সরকার ব্যয় করলেও বড় অংশ ছাড় হিসাবে এলপিজি বা জ্বালানির দাম কিছুটা কমাতেই পারে।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) কর্তৃপক্ষ সূত্রেও বলা হয়েছে, সরকার পাম্প করে জ্বালানি বিক্রি করতেই পারে। তাতে আইনগত কোনও বাধা নেই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কিনলে ডিলাররা গ্রাহকদের কিছু ‘সুযোগ-সুবিধা’ দিয়ে থাকে। খুচরো ক্রয়ের ক্ষেত্রে এরকম ছাড়ের নজির নেই। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, “রাজ্য সরকার খুচরো গ্রাহকদের (অটো চালক) ক্ষেত্রে কী করবে, তা আমাদের জানা নেই।”
তবে পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু জানান, এ দিন দিল্লি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতাই রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের ডিপোতে যে ‘অব্যবহৃত’ জমি পড়ে রয়েছে, সেখানে পেট্রোল পাম্প খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই আইওসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারি তরফে যোগাযোগ করা হয়। আজ, মঙ্গলবারই পাম্প খোলার পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারে আইওসি-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা সরকারি ডিপোগুলি পরিদর্শন করবেন। তাঁদের সঙ্গে তুষারবাবুও থাকবেন। মদনবাবু বলেন, “পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসাবে তুষারবাবুকে আমরা এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছি। উনিও রাজি হয়েছেন। ডিপো পরিদর্শনের সময়ে আইওসি-র জেনারেল ম্যানেজার ইন্দ্রজিৎ বসুও থাকবেন।” পরিবহণমন্ত্রী জানান, কসবা, লেকগার্ডেন্স, পাইকপাড়া, বেলঘরিয়া ডিপোয় আপাতত পাম্প তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরিবহণ দফতরের বিভিন্ন আধিকারিক মনে করেন রাজ্য সরকার পাম্প খুললে অটো চালকদের সমস্যা যেমন মেটার সম্ভাবনা আছে, তেমনই ডিপোর ‘অব্যবহৃত’ জমি ব্যবহার করে সরকারের ‘আয়ে’র একটা রাস্তাও বেরোতে পারে। পাম্পে কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে। ফলে পরিবহণ দফতরের ‘অতিরিক্ত’ কর্মীদের যেমন কাজে লাগানো যাবে, তেমনই নতুন কর্মস্থানেরও সুযোগ তৈরি হতে পারে। |