নোনাডাঙা বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদে মিছিল করতে এসে সোমবার গ্রেফতার হলেন ৮৬ জন। পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে কলেজ স্কোয়ার থেকে একটি মিছিল শুরু করেন বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যেরা। তখনই আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন মহিলাও রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিনের মিছিলের ব্যাপারে প্রশাসনকে আগাম কিছু জানানো হয়নি। তাই ওই কর্মসূচি শুরু হতেই মিছিলকারীদের আটকানো হয়। তা নিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু হলে গ্রেফতার করা হয় বেশ কয়েক জনকে।
রবিবারও নোনাডাঙা নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় বাইপাসের রুবি মোড় থেকে ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাত জনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার রুবির মোড়ে বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী মিছিলে লাঠি চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই মিছিল থেকেই পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগে মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির নেত্রী দেবলীনা চক্রবর্তী-সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে রবিবার জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দেবযানী ঘোষ, চিকিৎসক সিদ্ধার্থ গুপ্ত, পাথর্র্সারথি রায়, সৌমিক চক্রবর্তী, বাবুন চট্টোপ্যাধ্যায় ও অভিজ্ঞান সরকার।
এ দিন ধৃতদের আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দীপ্তেন্দ্রনাথ মিত্রের আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, রাজদীপ মজুমদার বলেন, “নোনাডাঙায় বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেছে মাওবাদী ও নকশালপন্থীরা। পুলিশের তদন্তে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তারা ওই এলাকায় অস্ত্রও মজুত করেছে।” অভিযুক্তেরা রেহাই পেলে ওই অস্ত্র উদ্ধারে সমস্যা হতে পারে। তাই তাঁদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করেন সরকারি আইনজীবীরা। বিচারক ধৃতদের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। |
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শুভাশিস রায় পাল্টা বলেন, “এখন কোথাও আন্দোলন হলেই তার সঙ্গে ‘মাওবাদী তত্ত্ব’ জুড়ে দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।” তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় অস্ত্র উদ্ধারের কোনও উল্লেখ এফআইআর-এ নেই। ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও রুজু হয়নি। ইট-পাটকেল ছাড়া ঘটনাস্থলে অন্য কিছু মেলেনি। সেখানে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি অপ্রাসঙ্গিক। অভিযুক্তদের আইনজীবী আরও বলেন, “ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ধৃত পার্থসারথিবাবু সে দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ কল্যাণীতে ছিলেন। অথচ পুলিশের দাবি, তিনি বিকেল ৪টের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। এটি অবাস্তব।” তাঁর বক্তব্য, একই ঘটনায় আগে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারক ওই দিনই তাঁদের জামিন দিয়েছিলেন। তাঁর মক্কেলরাও একই আইনগত অবস্থানে। তাই তাঁদের জামিন দিতে অসুবিধা কোথায়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শুভাশিসবাবু।
আন্দোলনকারীরা জানান, রবিবার ধৃত সাত আন্দোলনকারীর মুক্তি এবং উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের দাবিতেই সোমবারের মিছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন মিছিল করার ব্যাপারে প্রশাসনকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। সকাল থেকেই নোনাডাঙা বস্তির বাসিন্দারা এবং বিভিন্ন নকশালপন্থী সংগঠনের সদস্যেরা কলেজ স্কোয়ারে জড়ো হন। আগাম ব্যবস্থা নিতে বিরাট পুলিশবাহিনীও হাজির হয়েছিল। কলেজ স্ট্রিটের উপরে সারি দিয়ে দাঁড় করানো ছিল পুলিশ ভ্যান। বেলা দেড়টা নাগাদ কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু হওয়া মাত্রই পুলিশ আন্দোলনকারীদের আটকায়। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির পরে চারটি ভ্যানে চাপিয়ে আন্দোলনকারীদের লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। কেন মিছিল করতে দেওয়া হল না, তার প্রতিবাদে বাকি আন্দোলনকারীরা কলেজ স্কোয়ারে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
নোনাডাঙা থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষ এবং তাদের সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতারের নিন্দা করেছে বিজেপি। পুনর্বাসনের দাবিও তুলেছে তারা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘কলেজ স্ট্রিটের কোথাও ১৪৪ ধারা জারি নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ যে ভাবে মিছিলে অংশগ্রহণকারী, এমনকী মহিলা ও শিশুদেরও ধরপাকড় করেছে, তা অভূতপূর্ব ও বর্বরোচিত’। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-সহ উচ্ছেদের বিরুদ্ধেও তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগও তোলেন রাহুল। |