আসানসোল জুড়ে পুলকার অভিযান শুরু করল পুলিশ। পূর্ব ঘোষণা মতোই সোমবার সকাল থেকে একাধিক স্কুলের সামনে এই অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলকার চালকদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসবেন এডিসিপি (ট্রাফিক)। ওই দিন তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করবেন বলে জানিয়েছেন এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম পুলকার অভিযানে নেমেছে পুলিশ। তবে অতীতে এমন অভিযানের নজির আছে একাধিক। বরাবরই পুলকার দুর্ঘটনার পরে পুলিশ-প্রশাসন দিন কয়েকের জন্য নড়ে-চড়ে বসে। শুরু হয় ধরপাকড়। অল্প দিনের মধ্যেই সব থিতিয়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয় না।
সম্প্রতি আসানসোলের কোর্ট মোড় এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী বোঝাই একটি পুলকার দুর্ঘটনায় পড়ে। মাঝরাস্তায় দুলতে শুরু করেছিল বাসটি। শেষমেশ লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে মোটরবাইক ও বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে সেটি। পড়ুয়ারা কোনও মতে রক্ষা পেলেও গুরুতর জখম হন মোটরবাইক আরোহী।
এর পরেই শহরের নানা প্রান্তে চলাচলকারী পুলকারগুলির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যথারীতি নড়েচড়ে বসে পুলিশ। সোমবার থেকে শুরু হয় অভিযান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেশ কয়েকটি পুলকারে একাধিক ত্রুটি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চালকদের নাম ঠিকানা, গাড়ির মালিকদের নাম ঠিকানা নিয়েছি। এক মাসের মধ্যে গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র ও ফিট সার্টিফিকেট বানানোর নির্দেশ দিয়েছি।” তিনি আরও জানান, নিয়ম না মানার অভ্যাস অনেক দিনের পুরনো। অভ্যাস বদলানোর জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি অভ্যাস না বদলায় তখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযান লাগাতার চলবে। আচমকা অভিযানও হবে।
নিয়মনীতি মেনে পুলকার চালানো এবং গোটা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে কাল, বুধবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলকার চালকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। ভাস্করবাবু বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট পুলকার নিয়ে একাধিক নির্দেশ জারি করেছে। পুলকার চালক ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশগুলি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে।”
এডিসিপি জানান, যে সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পুলকারে চেপে স্কুলে আসে সেই গাড়িগুলির যাবতীয় তথ্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে রাখতে হবে। রাখতে হবে পুলকার চালক ও মালিকের নাম ঠিকানা। কোন গাড়ি কত ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে, তার যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ পড়ুয়াদের সংখ্যা, তাদের নাম, ঠিকানা সবই গাড়িতে ঝোলাতে হবে। পরিবহণ দফতর থেকে প্রতি মাসে পুলকারগুলিকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে এবং তা গাড়িতে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ যেন প্রয়োজনে ওই ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পরীক্ষা করতে পারে। নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার বেশি ছাত্রছাত্রী পুলকারগুলি আর বহন করতে পারবে না। এই নির্দেশ না মানলে পুলকার চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাস্করবাবু অভিভাবকদের কাছে আবেদন করেছেন, যে পুলকারগুলি এই সব নির্দেশ মেনে চলছে এক মাত্র সেই গাড়িতেই যেন তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পাঠান।
এই নজরদারি কত দিন বজায় থাকে, সেটাই অবশ্য এখন দেখার। |