আসার পথে কালবৈশাখী এ বার সঙ্গী পেয়ে গিয়েছিল ঘূর্ণাবর্তকে। সেই সঙ্গীর দৌলতে তার দাপট চলছেই। ঘূর্ণাবর্তের জেরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে রবিবারেও। এ দিনের ঝড়ে তেমন তীব্রতা না-থাকলেও বাজ পড়ছে ঘনঘন। সঙ্গে বৃষ্টি। এ দিন দক্ষিণবঙ্গে বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন চার জন। তাঁদের মধ্যে তিন জনই পুরুলিয়ার। বজ্রাঘাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে নদিয়ার চাপড়া এলাকার পিঁপড়েগাছিতে। শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে বজ্রাঘাতে এক মহিলার মৃত্যু হয়। ওই দিনের দুর্যোগে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় প্রাণ হারান আরও ১১ জন। আবহবিদদের আশা, আজ, সোমবার থেকেই ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে যাবে।
ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা একের পর এক ঘূর্ণাবর্তে গত পাঁচ দিন গোটা পশ্চিমবঙ্গেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পরপর দু’দিন দু’টি তীব্র কালবৈশাখী পেয়েছে কলকাতা। |
আকাশ চিরে। রবিবার ময়দানের কাছে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
শুক্রবার সকালে পৌনে এক ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনি পরপর তিন দিন উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কালবৈশাখীর
তীব্র ঝড়। তার দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকা। দক্ষিণবঙ্গে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি তেমন না-হলেও ঘনঘন বজ্রপাতে বেশ কিছু
প্রাণহানি ঘটেছে।
রবিবার পুরুলিয়ায় বাজ পড়ে এক মহিলা-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন নবীন গরাই (২৪), রঞ্জিত রুইদাস (২২) এবং নিয়তি সিংহসর্দার (২২)। তাঁদের বাড়ি বলরামপুর থানা এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বলরামপুরে রঙ্গাডি গ্রামের কাছে একটি ইটভাটায় দুপুরে পুরোদমে কাজ চলছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামায় ১০-১২ জন কর্মী একটি ঘরে আশ্রয় নেন। সেই সময়েই বাজ পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। আহত হন চার জন। তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চাপড়ার পিঁপড়েগাছিতে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে সুশান্ত দাস (৫২) নামে এক প্রৌঢ়ের। তিনি রান্নাঘরে ছিলেন। তখনই বাজ পড়ে। শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের ঢোলাহাট থানা এলাকার শরৎনগরে শনিবার সন্ধ্যায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। পুলিশি সূত্রের খবর, মৃতার নাম দেবলা হালদার (৪৪)। সন্ধ্যায় মাঠ থেকে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তখনই বাজ পড়ে। তিনি মারা যান।
টানা তিন দিনের ঝড়বৃষ্টির পরে রবিবার উত্তরবঙ্গে কোথাও অবশ্য তেমন দুর্যোগের খবর মেলেনি। দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত বাংলাদেশে এবং অন্য একটি ঘূর্ণাবর্ত উত্তরবঙ্গের দিকে চলে গিয়েছে ঠিকই।
কিন্তু ওই সব ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে যে-জলীয় বাষ্প পরিমণ্ডলে ঢুকছে, তা যাচ্ছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়েই। মেঘে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় তা দক্ষিণবঙ্গের উপরেই ভেঙে যাচ্ছে। তার ফলে একটানা ঝড়বৃষ্টি চলছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। তবে ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় সোমবার থেকে ঝড়বৃষ্টি কমে যাবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। |