রাজীব-খুনের বারাসতে সন্ধ্যায় দাপাদাপি দুষ্কৃতীদের
বধূর গয়না ছিনতাই রুখতে গিয়ে প্রহৃত বর
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র রাতে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হতে হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাসকে। বারাসতের ভিআইপি এলাকায় জেলাশাসকের বাংলোর সামনে।
বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই, রবিবার ভরসন্ধ্যায় নববধূর গয়না ছিনতাই রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন তাঁর স্বামী। সেই বারাসতেই। রাজীব-হত্যার জায়গা থেকে আড়াই-তিন কিলোমিটার দূরে, জগদিহাটা কাজিপাড়ার কাছে যশোহর রোডের উপরে। আনিসুর রহমান নামে ওই যুবক গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নবদম্পতির কিছু গয়না খোয়া গিয়েছে।
আজ, সোমবার দুপুরেই বারাসত স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই
রাবেয়া বিবি
উপলক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই বারাসত এলাকায় যশোহর রোড (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক) জুড়ে চলছিল পুলিশি টহলদারি ও গাড়ি-তল্লাশি। এর মধ্যে রাজপথে নবদম্পতির পথ আটকে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে পাঁচ দুষ্কৃতীর দৌরাত্ম্য সার্বিক ভাবে বারাসতেরই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল। এ দিনের ঘটনায় পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
দত্তপুকুরের দিঘড়া থেকে একটি স্করপিও গাড়িতে বারাসতের মাঝেরপাড়ায় ফিরছিলেন নবদম্পতি আনিসুর ও রাবেয়া বিবি। পুলিশি সূত্রের খবর, জগদিহাটা কাজিপাড়ায় একটি পানশালার কাছে প্রথমে মোটরবাইক নিয়ে এক যুবক গাড়িটিকে ধাওয়া করে। সে কিছু বলছে দেখে গাড়ি থামিয়ে আনিসুরের বন্ধু শেখ সাহাবুদ্দিন নেমে যান। পাশেই ছিল একটি পানশালা। অন্য দিকে মাঠ। সেখানেই মোটরবাইক আরোহী যুবকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও চার যুবক। তারা বলতে থাকে, ‘তোরা গাড়ি থেকে আমাদের উপরে সিগারেটের ছাই ফেলেছিস।’ বলতে বলতেই সাহাবুদ্দিনকে মারতে থাকে দুষ্কৃতীরা। বেগতিক দেখে আনিসুর গাড়ি থেকে নেমে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। মারধর করা হয় তাঁকেও। এর পরে নববধূ রাবেয়া গাড়ি থেকে নামলে তাঁকে ঘিরে ধরে তাঁর গলার হার টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ওই তরুণীকেও ঘুষি-লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। ধস্তাধস্তিতে মাটিতে পড়ে যান রাবেয়া। আনিসুর স্ত্রীকে বাঁচাতে গেলে তাঁর উপরে আক্রোশ বেড়ে যায় দুষ্কৃতীদের। বেধড়ক মার খান তিনি। ইতিমধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে যান। বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা উল্টে জনতাকে বলতে থাকে, ‘দেখুন না, ওরা গাড়ি থেকে আমাদের উপরে সিগারেটের ছাই ফেলছিল।’ বলতে বলতেই তারা মোটরবাইকে চড়ে পালিয়ে যায়।
২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দিদি রিঙ্কুকে সাইকেলে বসিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েছিল রাজীব। দুষ্কৃতীরা দিদিকে উত্ত্যক্ত করছে দেখে সে রুখে দাঁড়ায়। দুষ্কৃতীদের মারধর ও ছুরির আঘাতে লুটিয়ে পড়ে সে। সেখানকার বিভিন্ন বাংলোর দরজায় সাহায্য চেয়েও পাননি তার দিদি। পরের দিন রাজীব মারা যায়। রাজীব-হত্যার বছরখানেকের মধ্যে বারাসতের ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কখনও দুষ্কৃতীদের ‘অভব্য’ আচরণের শিকার হয়েছেন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল, কখনও বা ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েছেন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী। তিন দুষ্কৃতীকে ধাওয়া করতে গিয়ে এই অঞ্চলেই পাল্টা গুলির হাত থেকে কোনও মতে বেঁচে যান বারাসত থানার এক পুলিশ অফিসার। তার পরে বারাসতে দুষ্কৃতী-রাজ ঠেকাতে নজরদারি আঁটোসাঁটো করা হয়েছে বলে বারবার দাবি করেছে পুলিশ। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তের আঁতুড়ঘর আসলে নেশার আড্ডাগুলো। সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বারাসত যে বদলায়নি, এ দিন ভরসন্ধ্যায় নবদম্পতির উপরে হামলার ঘটনা সেটাই ফের বুঝিয়ে দিল বলে মত বাসিন্দাদের।
এ দিনের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আনিসুর। তাঁর চোখে-মুখে কালশিটে। কনের সাজ ছাড়ার আগেই অভিযোগ লেখানোর জন্য বারাসত থানায় যেতে হয় রাবেয়াকে। থানায় বসে তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে ওরা মারছে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। দুষ্কৃতীরা আমার গলার হার টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করে। আমাকেও এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেয়।” হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আনিসুর বলেন, “আমরা কেউ সিগারেট খাই না। ওরা কেন ওদের গায়ে ছাই ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করছিল, কে জানে! আমার স্ত্রীকে ওদের হাত থেকে ছাড়াতে যেতে ওরা সবাই মিলে আমায় আরও বেশি মারধর করতে লাগল। মনে হচ্ছে, ছিনতাইয়ের মতলবেই ওরা গাড়ি থামিয়েছিল।”
উত্তর ২৪ পরগনার এসপি চম্পক ভট্টাচার্য জানান, মোটরবাইক নিয়ে যে-যুবক প্রথমে গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করছিল, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম ভুলু। বাকিদেরও চিহ্নিত করা গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মারধর, ছিনতাই এবং মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশি সূত্রের খবর, যেখানে হামলা হয়, তার কাছেই পানশালায় ওই দুষ্কৃতীদের কেউ কেউ মদ খেয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.