|
|
|
|
মাওবাদীদের কবলে মা, পুলিশে চাকরি চান পানমণি |
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
মেয়েকে আগলে রেখেছিলেন মা। যেতে দেননি জঙ্গি-স্কোয়াডে। ফতোয়া অগ্রাহ্য করার ‘অপরাধে’ মা-কেই তুলে নিয়ে গিয়েছিল মাওবাদীরা। দেড় বছর কেটে গিয়েছে। মা-কে খুঁজতে এখন পুলিশে চাকরি চান লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে ঘেরা টেসাবাঁধ গ্রামের পানমণি মাণ্ডি।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে জুনিয়র কনস্টেবল পদে খড়্গপুরের সালুয়ায় শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পানমণি। ২৫ মার্চ মেদিনীপুরে লিখিত পরীক্ষা দেন। শনিবার ফল বেরিয়েছে। তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ভেঙে না পড়ে পরের বার ফের পরীক্ষায় বসার সঙ্কল্প নিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের এই তরুণী। তাঁর কথায়, “মায়ের মতো অনেকেই এখনও নিখোঁজ। তাঁরা কোথায় আছেন, কেমন আছেনকেউ জানে না। আতঙ্কে হয়তো জানার চেষ্টাও করে না। আমিও এক সময় আতঙ্কে থাকতাম। এলাকাবাসীর ভয় কাটানোর জন্য পুলিশে চাকরি করতে চাই। মা-কেও খুঁজব।” নিজের অবস্থা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন বলে পানমণি জানান। |
পানমণি মাণ্ডি |
মা মাধবী মাণ্ডি |
|
জমি নেই। আছে বলতে টিনের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট মাটির বাড়ি। পানমণির বাবা ধীরেন মাণ্ডি শারীরিক ভাবে অশক্ত। মা মাধবীদেবীই ছিলেন সংসারের কর্ত্রী। পানমণি বলেন, “দিনমজুরি করে সংসার চালিয়েও আমাকে আর দুই ভাইকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখত মা।”
২০০৯-এ জনগণের কমিটির উত্তুঙ্গ আন্দোলন-পর্বে গ্রামে-গ্রামে মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ে। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে মাওবাদীরা। পানমণি বলেন, “ভাইরা ছোট থাকায় মাওবাদীরা আমাকে স্কোয়াডে চেয়ে জোরাজুরি করলেও মা রাজি হননি। তাই ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে ওরা বাড়ি থেকে মাকে তুলে নিয়ে চলে যায়।” আতঙ্কে পানমণিরা বছর খানেক পুলিশে অভিযোগও করেননি। দীর্ঘ পনেরো মাস পর সাহস জুগিয়ে ডায়েরি করতে গেলে লালগড় থানা নিতে অস্বীকার করে। মেদিনীপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (সদর) সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান পানমণি। অবশেষে এ বছর জানুয়ারিতে অভিযোগ নেয় লালগড় থানা। তবে মাধবীদেবীর খোঁজ মেলেনি।
চোখের জল মুছে পানমণিকেই সংসারের দায়িত্ব তুলে নিতে হয়েছে কাঁধে। দুই ভাইয়ের পড়াশোনা চালাতে গিয়ে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। দিনমজুরিই পেশা এখন। তাঁর কথায়, “গত বছর মুখ্যমন্ত্রী পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নিই, যা থাকে কপালে ওই চাকরিই করব।”
এ বার অকৃতকার্য হলেও হাল ছাড়তে নারাজ। “পরের বার পুলিশের চাকরি আদায় করে ছাড়ব”প্রত্যয়ী শোনায় জঙ্গলমহলের মেয়ের গলা।
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
|
|
|
|
|