দিনভর থানায় আটক ৭০ জন বিক্ষোভকারী
পুলিশ ডেকে শহর সাফ পুরসভার
পুলিশ নামিয়ে বাচ্চা কোলে মহিলা থেকে শুরু করে স্কুলের ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে প্রায় ৭০ জনকে থানায় দিনভর আটকে রেখে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জঞ্জাল ফেলা শুরু করল শিলিগুড়ি পুরসভা। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দূষণে ‘অতিষ্ঠ’ হয়ে এলাকার সচেতনতা জাগরণ সমিতি গত শুক্রবার থেকে পুর কর্মীদের জঞ্জাল ফেলতে বাধা দেয়। তার জেরে গোটা শহরে জঞ্জাল জমতে শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে রবিবারও বিক্ষোভকারীরা কর্মীদের বাধা দিলে পুর কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। র্যাফ, মহিলা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা অবরোধকারীদের আটক করেন। ভক্তিনগর থানায় নিয়ে আসা হয় তাঁদের। বিকেল থেকে এলাকার বাসিন্দারা ভক্তিনগর থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ ৪৬ জনকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। শিশু এবং স্কুল ছাত্রছাত্রীদের বন্ড দিতে হয়নি। তবে দিনভর তাঁদের থানায় কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সন্ধ্যা নাগাদ তাদের সামান্য খাবার দেওয়া হয়। শিশু এবং স্কুল ছাত্রছাত্রীদের কেন দিনভর থানায় আটকে রাখা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সমিতি।
পুলিশ পাহারায় ভাগাড়ে নোংরা ফেলানোর কাজ চলছে। রবিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, এ ছাড়া উপায় ছিল না। পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “শিশু এবং মহিলাদের সামনে রেখেই আন্দোলনকারী অবরোধে নেমেছিলেন। পুলিশকে বাধ্য হয়েই সবাইকে থানায় নিয়ে যেতে হয়েছে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাঁরা কোনও ভাবেই আন্দোলন থেকে সরবেন না। সমিতির সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “মাস দুয়েক আগেও আমাদের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে কীটনাশক চড়িয়ে দেওয়ায় সমস্ত মশা-মাছি এলাকার প্রতিটি পাড়ায় ঢুকে পড়েছে। পুরসভা কী করতে চায় সেটা মন্ত্রী লিখিত জানালে ভেবে দেখব।”
ষাটের দশকে শিলিগুড়ি পুরসভা তৈরির কয়েক বছরের মধ্যে ডনবসকো স্কুলের পিছনে প্রায় ২৮ একর জমিতে পুরসভা এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করে। গত কয়েক দশকে এলাকায় জনবসতি বেড়েছে। স্কুলই তৈরি হয়েছে প্রায় ১৮টি। বহুতল বাড়ি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, জনবসতি বাড়ায় জঞ্জালের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিন কয়েকশো টন জঞ্জাল ওই এলাকা ফেলা হয়। তার মধ্যে শৌচাগার থেকে হাসপাতালের আবর্জনা সবই রয়েছে। সমস্যা মেটাতে শহর লাগোয়া পুঁটিমারিতে পুরসভা জমি কিনলেও আন্দোলনের জেরে সেখানেও জঞ্জাল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে পুর কর্তৃপক্ষ জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করা হবে। সেখানে জঞ্জাল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড়ের কাজে নেমেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ভুয়ো আশ্বাস দিয়ে পুরসভা সময় কিনছে। ভক্তিনগর থানায় বসে চয়নপাড়ার বাসিন্দা মাধবী রায় বলেন, “খাবারে মুখ দিতে পারি না। মনে হয় দুর্গন্ধে ভরা।” পুলিশ মাধবী দেবীর সঙ্গে তাঁর দুই যমজ মেয়ে নেহা ও নিকিতাকেও তুলে এনেছে। দু’জনেরই বয়স তিন বছর। মাধবী দেবীর অভিযোগ, “মহিলা পুলিশকে বললাম, আমার সঙ্গে বাচ্চা রয়েছে। তাও ধরে নিয়ে এল।” আটকদের মধ্যে নার্সারি’র ছাত্র সমীর রায় এবং ক্লাস ওয়ানের ছাত্র সমিত রায়ও রয়েছে। তাদের মা বেবি দেবীর বক্তব্য, “যেভাবে বসবাস করছি তাতে তিলে তিলে আমরা মরছি। তার চেয়ে থানায় বসে মরাই ভাল।”
আটকদের মধ্যে একতিয়াশাল তিলেশ্বরী স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সবিতা রায়, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মমতা রায়, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রেশমি সিংহের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র দেবরাজ ও দীপরাজ খাতিও রয়েছে। এলাকার প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক কৌশল কিশোর সিংহ বলেন, “আমরা তো চাই না যে শহরে জঞ্জাল ভরে যাক। কিন্তু আমাদের সমস্যাও তো বুঝতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.