ট্যাক্সির প্রিন্টার-মিটার নিয়ে সমস্যা মেটাতে কলকাতা হাইকোর্টের সুপারিশই মেনে নিল রাজ্য সরকার। যে সব ট্যাক্সি ৩১ মার্চের মধ্যে প্রিন্টার-মিটার নিতে পারেনি, তাদের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিল রাজ্য। ৭৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে প্রিন্টার-মিটার নিতে পারবেন ট্যাক্সিমালিকেরা। প্রিন্টার-মিটার না-থাকায় তিন হাজার ট্যাক্সি ইতিমধ্যে বসে গিয়েছে। আইনগত কোনও বাধা না-থাকলে জরিমানা দিয়ে ট্যাক্সির প্রিন্টার-মিটার নেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
তবে, জরিমানা দিয়ে প্রিন্টার-মিটার নেওয়ার সময়সীমা বাড়লেও ১৯ এপ্রিল তাদের ডাকা ট্যাক্সি-ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে না ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “ওই ধর্মঘট আমরা ডেকেছি মূলত ভাড়া বৃদ্ধির দাবি এবং পুলিশ-প্রশাসনের নানা ‘অবিচারের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।” মিটার নেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে বরং স্বাগতই জানিয়েছেন বিমলবাবু। তবে তিনি বলেন, “ট্যাক্সিমালিকদের পিঠ এমনিতেই দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। ৭৫০ টাকা না-নিয়ে ১৫০ টাকা জরিমানা নেওয়া উচিত ছিল।”
মিটারের প্রিন্টার থেকে বার হওয়া রসিদ দেখেই ট্যাক্সির ভাড়া মেটানো নিয়ম। |
ওই রসিদে ট্যাক্সির নম্বর, দিন-তারিখ লেখা থাকায় ট্যাক্সিতে কোনও জিনিস ফেলে এলে যেমন সুবিধা হয়, তেমনই ট্যাক্সি নিয়ম না-মানলে পুলিশের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও জানানো যায়। কলকাতা হাইকোর্ট গত সেপ্টেম্বর মাসে ওই প্রিন্টার-মিটার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক বলে রাজ্য পরিবহণ দফতরকে নির্দেশিকা জারি করেছিল। কিন্তু সব ট্যাক্সিতে সেই মিটার নেওয়া হয়নি। যে ট্যাক্সিতে প্রিন্টার রয়েছে, তার চালকেরাও বিভিন্ন সময়ে রসিদ দিতেন না বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩১ মার্চের মধ্যে সব ট্যাক্সিতেই ওই মিটার বসানোর নির্দেশ দেয়।
কিন্তু ১ এপ্রিল দেখা যায়, প্রায় তিন হাজার ট্যাক্সি প্রিন্টার-মিটার নিতে পারেনি। ওই সব ট্যাক্সির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। ফলে তিন হাজার ট্যাক্সি আর রাস্তায় বেরোয়নি। ২ এপ্রিল রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে নতুন মিটার নেওয়ার সময়সীমা বাড়াতে বলে। হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিলেও তারা রাজ্য সরকারকে নির্দিষ্ট একটি সুপারিশ করেছিল। জরিমানা দিয়ে ওই সময়সীমা বাড়ানো যায় কি না, তা রাজ্য সরকারকে ভেবে দেখতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, তারা আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, পরিবহণ আইনে জরিমানা দিয়ে সময়সীমা বাড়ানোর কোনও বিধি নেই।
রবিবার পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “হাইকোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আইনজীবীদের আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছিলাম। তাঁরা এতে সায় দিয়েছেন।” পরিবহণ আইনে কি এ ভাবে জরিমানা নেওয়ার বিধান রয়েছে? সরকারি আইনজীবী পণ্টু দেবরায় বলেন, “১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিক্লস আইনের ৮৬ (৫) ধারায় জরিমানা নেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরা সেই ধারাই এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছি।” এ ভাবে সময়সীমা না বাড়ালে তিন হাজার ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতে হত বলে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন। |