দমকলের নিয়মকানুন মানা হয়নি। শোনা হয়নি সিইএসসি-র পরামর্শও। এই দুই পক্ষের মতামতের তোয়াক্কা না-করে, বিপদের ঝুঁকি নিয়েই আজ, সোমবার থেকে পুরোদমে চালু হতে চলেছে হাতিবাগান বাজার। আর দোকানিদের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, যাঁর উপরে রয়েছে ক্রেতা-সুরক্ষার ভার।
পুরসভার মতে, বাজারটি বেসরকারি। আইনগত ভাবে ওই বাজার খুলতে দেওয়ার দায় পুলিশ ও দমকলের। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়ার বক্তব্য, “সব সময়ে তো ছড়ি ঘোরানো যায় না। তা হলে কলকাতার অনেক বাজার বন্ধ করে দিতে হবে।”
এরই মধ্যে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের ‘সঙ্গ’ দিতে আসরে নেমেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাধনবাবু। রবিবার ওই বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী মাইকে ঘোষণা করেন, “বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে ওদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে ঘেরাও করব সিইএসসি-র অফিস।” (যদিও সাংবিধানিক ভাবে কোনও মন্ত্রী ‘ঘেরাও করব’ বলতে পারেন না)
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার থেকে বাজার চালু হলেও সেখানে এখনও বিদ্যুতের (ওয়্যারিং) তার বসেনি। |
বাজারের মিটারবক্সে সিইএসসি বিদ্যুৎ সংযোগ না-দেওয়ায় দোকানগুলিতে আলোর ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় বেআইনি ভাবে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বারবার জানানো সত্ত্বেও সিইএসসি মিটারবক্সে সংযোগ দিচ্ছে না। উল্টে তার জন্য টাকা চাইছে। যদিও ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের কেউই বেআইনি সংযোগ নেবেন না। অন্য দিকে, সিইএসসি-র দাবি, নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীদের তরফে কোনও আবেদন এখনও পর্যন্ত করা হয়নি।
গত ২২ মার্চ বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাতিবাগান বাজার। ঘটনার পরের দিন থেকেই পুর-কর্তৃপক্ষ বাজারটির বিপজ্জনক অংশ ভাঙা ও পোড়া জিনিসপত্র সাফাইয়ের কাজ শুরু করে দেন। আর ওই কাজ চলাকালীনই বাজারের একপাশে সব্জি ও মাছের দোকান চালু হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, পয়লা বৈশাখের আগেই পুরো বাজার চালু করার ব্যবস্থা হোক। রবিবার স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানান, বাজারের বিপজ্জনক অংশ ভাঙার কাজ শেষ হয়েছে। বাজারটি বেসরকারি। তাই আইনগত ভাবে বাজারটি খোলার ব্যাপারে পুলিশ ও দমকল-কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক অভিজিৎ সাহা জানান, সোমবার থেকে ফল, ফুল, সব্জি, মাছ ও রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলি চালু হবে। পয়লা বৈশাখের আগে বাজার চালু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা খুশি।
কিন্তু আলোর ব্যবস্থা কী হবে? ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জানানো হয়, আপাতত জেনারেটর চলবে। কিন্তু সেটা যে স্থায়ী ব্যবস্থা নয়, তা মানছেন ওই ব্যবসায়ীরা। বস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপন মোদক বলেন, “বাজারের সব ব্যবসায়ীকেই বলা হয়েছে হুকিং না করতে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে দমকলের অফিসারেরা ঘুরে গিয়েছেন। তাঁদের নির্দেশ মতো স্থায়ী দোকানগুলিতে অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। সব্জি ও মাছের স্টলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে দমকলের তরফে জানানো হয়, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য যে সব নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি মানা হয়নি।
হাতিবাগান বাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে সাধনবাবুর ভূমিকা নিয়ে অস্বস্তিতে পুর-কর্তৃপক্ষ। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসারের কথায়, “বাজারের বিপজ্জনক অংশ ভাঙার কাজ চলাকালীন মাছ ও সব্জি ব্যবসায়ীদের সেখানে ব্যবসা শুরু করতে বলেন সাধনবাবু। মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ওই সময়ে ব্যবসা শুরু হওয়ায় সাফাই ও ভাঙাভাঙির কাজে সমস্যা বাড়ে।” এ দিনও সাধনবাবুর বক্তব্যের পরে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে রোষ বাড়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে সিইএসসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিটারবক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য বিধিসম্মত আবেদন পত্র জমা না পড়াতেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি।
রবিবার সকালে ওই বাজারের পুনর্গঠনের জন্য মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন নিয়ে একটি মিছিল বেরোয়। সেই মিছিলে হাঁটেন এলাকার বাসিন্দা তথা রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল ও বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন, স্থানীয় কাউন্সিলর অতীন ঘোষ, বিধায়ক সাধন পাণ্ডে প্রমুখ। |