বিনিয়োগ পরিকল্পনা শুরু
করার এটাই আদর্শ সময়
বাজেট পেশ হয়ে গিয়েছে। ঘোষিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে নতুন সুদের হার ও লগ্নির শর্ত। স্থিরতা ফিরছে শেয়ার বাজারেও। সব মিলিয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বাজারের চিত্রটি এখন অনেক স্পষ্ট। সবে শুরু হয়েছে নতুন আর্থিক বছর। অর্থাৎ লগ্নি পরিকল্পনার এটিই আদর্শ সময়। লগ্নিকারীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন প্রকল্পে সঞ্চয়ের ভাল-মন্দ দিক পর্যালোচনা করা যেতে পারে আজকের প্রতিবেদনে।
প্রবীণ নাগরিক। করের দিক থেকে সুবিধা বাড়েনি। স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে প্রবীণত্বের বয়স ৬৫ থেকে কমিয়ে ৬০ বছর করা হয়েছে। ৮০ডি ধারায় ২০০০০ টাকার কর ছাড়ের মধ্যে স্বাস্থ্য বিমা বাবদ ১৫০০০ টাকা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে করছাড়ের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বেড়ে হয়েছে ৯.৩%। ৮.৫% হয়েছে মাসিক আয় প্রকল্পের সুদ। এই বৃদ্ধির পরেও কিন্তু এখনও বেশি আকর্ষণীয় ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতের সুদ। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক প্রবীণ নাগরিকদের এখন সুদ দিচ্ছে ৯.৭৫% থেকে ১০.৫০%।
নবীন নাগরিক। সবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন এমন মানুষ থেকে শুরু করে মাঝবয়সী নাগরিকদের ফেলা যায় এই বিভাগে। স্বভাবতই এঁদের পরিকল্পনা হবে দীর্ঘমেয়াদি। এঁদের অবশ্যই থাকা উচিত একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট। নিতে হবে উপযুক্ত জীবন বিমা। খুলে নিতে হবে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট। এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করতে পারেন ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড এবং উচ্চমানের ইক্যুইটি শেয়ারে। হাতে লগ্নিযোগ্য থোক টাকা থাকলে তা রাখা যেতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঙ্ক আমানতে। কমবয়সীরা যোগদান করতে পারেন সরকারের উদ্যোগে তৈরি নতুন পেনশন প্রকল্প বা এন পি এস-এ। কর্মরতা নন এমন মহিলারা তাঁদের সাংসারিক সাশ্রয় থেকে খুলে ফেলতে পারেন রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট। এখন সুদের হার ভাল। ৫/১০ বছর মেয়াদে সুদে-আসলে থোক টাকা জমে উঠলে তা দিয়েই শখ বা প্রয়োজন মেটানো যেতে পারে। ছোট মেয়াদে ইউলিপ লাভজনক নয়। প্রথম দিকে খরচ বেশ বেশি। ইউলিপ-এ যোগদান করলে তা হতে হবে বড় মেয়াদের জন্য। সোনাতেও লগ্নির কথা ভাবতে পারেন কম বয়সের নাগরিকরা।
করদাতা। সব দিক থেকে এ বার সবথেকে বেশি লাভবান হয়েছেন করদাতারা, বিশেষ করে ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন যাঁরা। এঁদের বড় লাভ হয়েছে করের স্তর পুনর্বিন্যাসে। লাভ বেড়েছে পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদ বেড়ে ৮.৮% হওয়ায়। এ ছাড়া ৩০,০০০ কোটি টাকার জায়গায় এ বারের বাজেটে অনুমোদন মিলতে চলেছে ৬০,০০০ কোটি টাকার করমুক্ত পরিকাঠামো বন্ড ইস্যুর। ৮.৩ শতাংশ পর্যন্ত করমুক্ত সুদ পাওয়া যায় এই বন্ডে। অর্থাৎ উঁচু হারে করদাতাদের সুবিধাজনক শর্তে টাকা রাখার পথ প্রশস্ত হয়েছে। পিপিএফ অ্যাকাউন্টেও বার্ষিক লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ৭০,০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের আয়, তাঁদের জন্য আসতে চলেছে রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সঞ্চয় প্রকল্প। এই পর্যায়ের ইক্যুইটিতে নতুন লগ্নিকারীরা বছরে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে তার ৫০ শতাংশের উপর পাবেন করছাড়ের সুবিধা। প্রকল্পটির রূপরেখা দেওয়ার কাজ চলছে। আশা করা যায় মাসখানেকের মধ্যে জানা যাবে লগ্নির শর্তগুলি। সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদ ৮.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮.৬ শতাংশ করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। কর সাশ্রয়ের জন্য সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করতে হবে প্রত্যক্ষ কর-বিধির কথা মাথায় রেখে। ১/২ বছর মেয়াদে এফএমপি করদাতাদের কাছে ভাল লগ্নির জায়গা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বনিযুক্ত মানুষ। এঁদের পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। ঝুঁকি বিমুখ না-হলে এসআইপি পদ্ধতিতে ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড অথবা ব্যালান্সড ফান্ডে নিয়মিত লগ্নি করতে পারেন। জীবন বিমা থাকা আবশ্যিক। থাকতে হবে স্বাস্থ্য বিমাও। দীর্ঘ মেয়াদে রেকারিং ডিপোজিটও মন্দ নয় স্ব-নিযুক্তদের জন্য। তহবিলের একাংশ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনে তোলা যায়। বর্তমানে অতি অল্প মেয়াদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে (১০ বছর পর্যন্ত) বেশ আকর্ষণীয় হারে সুদ দিচ্ছে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে নিয়মিত সোনা অথবা গোল্ড ফান্ড ইউনিট কেনা যেতে পারে। স্ব-নিযুক্তদের ভাবা উচিত পেনশন ফান্ডে যোগদানের কথাও। অর্থাৎ বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই শ্রেণির মানুষের বিনিয়োগ-পরিকল্পনা হতে হবে বহুমুখী।
সঞ্চয় পরিকল্পনা করা যেতে পারে সদ্যোজাত শিশু, ছাত্র এবং ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি নাগরিকদের জন্যও। বয়স এবং ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ অনুযায়ী ইক্যুইটিতে নিয়মিত লগ্নির কথা ভাবতে পারেন সব শ্রেণির লগ্নিকারীই। দীর্ঘমেয়াদে সম্পত্তিও লগ্নির ভাল জায়গা হতে পারে। সোনার পাশাপাশি লগ্নির জায়গা হিসাবে আকর্ষণ বেড়েছে রুপোরও। লগ্নির জায়গা এখন প্রচুর। প্রত্যেককে নিজের নিজের পরিকল্পনা রচনা করতে হবে বয়স, প্রয়োজন, আর্থিক সামর্থ, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি অনুযায়ী। দীর্ঘ মেয়াদে ছোট হলেও নিয়মিত সঞ্চয় করে গেলে সময়কালে মেওয়া ফলে। সঞ্চয় পরিণত হয় সম্পদে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.