পদত্যাগ করলেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। তাঁর দাবি, শনিবার কলকাতায় দলের বৈঠকে তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে ইস্তফাপত্র তুলে দিয়েছেন। ইস্তাফাপত্রে লিখেছেন, ‘বিভিন্ন সিদ্ধান্তে মনে হয়েছে, দল আমার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না। সে জন্য ইস্তফা দিলাম’।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কৃষ্ণবাবুর পদত্যাগপত্র দলে গৃহীত হয়েছে। এ দিনই কলকাতার বৈঠকে জলপাইগুড়ি জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে দু’টি জেলায় ভাগ করা হয়েছে। একটি জলপাইগুড়ি ও অন্যটি আলিপুরদুয়ার। জলপাইগুড়ির মধ্যে জেলা সদর, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, রাজগঞ্জ ও মালবাজার এলাকা থাকছে। ডুয়ার্সের চা-বলয়ের বেশির ভাগই পড়ছে আলিপুরদুয়ারের মধ্যে। আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারীকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণবাবুর জায়গায় জলপাইগুড়িতে কার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে, তা এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
কৃষ্ণবাবুর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ির মতো বড় জেলার দায়িত্ব সাড়ে তিন বছর ধরে সামলেছেন কৃষ্ণবাবু। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জলপাইগুড়িকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কৃষ্ণবাবু মানতে পারেননি। গোটা জেলার বদলে, একটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া কার্যত জেলা সভাপতির ‘অবনমন’ বলে মনে করাতেই কার্যত তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে ওই বিষয়ে কৃষ্ণবাবু ইস্তফাপত্রে কিছু উল্লেখ করেননি। মন্তব্যও করেননি। কলকাতা থেকে ফোনে তিনি বলেন, “আমি ইস্তফা দিয়েছি। তবে দলকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনে দলনেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, তা আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তৃণমূল-অন্দরের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের পরেই কৃষ্ণবাবু এলাকায় সংগঠন বাড়াতে পারছেন না অভিযোগে দলের একাংশ সমালোচনা শুরু করে। জলপাইগুড়িতে কর্মী সম্মেলনে গিয়ে এলাকায় সংগঠনের বিস্তার না হওয়ার প্রসঙ্গে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। এমনকী, রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ বইতে থাকলেও জলপাইগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল একটি মাত্র আসন পেয়েছে কেন, তা নিয়েও দলে প্রশ্ন ওঠে।
পাশাপাশি, বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত একাধিক নেতা জেলায় কৃষ্ণবাবুর ‘সমান্তরাল’ সংগঠন গড়ে তোলেন। দলের বিভিন্ন ব্যাপারে জেলা সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলের মধ্যে কৃষ্ণবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত একাধিক নেতা প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও করেন। কৃষ্ণবাবুর পদত্যাগ করার পিছনে সেই সব কারণও থাকতে পারে বলে মনে করছেন জেলা রাজনীতির নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা। |