প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কাটোয়ায় চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনবে বলে স্থির করেছে এনটিপিসি। প্রায় একই পথে হেঁটে আলিপুরদুয়ারে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের জন্য কৃষিজীবীদের থেকে ‘পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন’ কর্তৃপক্ষও সরাসরি জমি কিনতে চলেছেন বলে ‘গ্রিড’-এরই স্থানীয় কর্তার দাবি।
বছর পাঁচেক আগে জলপাইগুড়ি জেলা ও কোচবিহার জেলার মাঝামাঝি এলাকায় ‘সাব-স্টেশন’ গড়তে উদ্যোগী হয় ‘গ্রিড’। ওই প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০০ একর জমি প্রয়োজন। কোচবিহার জেলার মরিচবাড়ির খোলটা এলাকায় ৯৩ একর এবং আলিপুরদুয়ারের মরিচবাড়ি ও পোরোরপাড় এলাকায় বাকি জমি চিহ্নিত হয়। কিন্তু তার পরেই এলাকার অনিচ্ছুক চাষিরা ‘ভূমিরক্ষা কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের জেরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি রাজ্যের বাইরে অসম কিংবা বিহারে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
শনিবার ‘গ্রিড’-এর আলিপুরদুয়ারের প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চিফ ম্যানেজার চন্দন নন্দী বলেন, “চাষিরা জমির জন্য বিঘা প্রতি ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেছেন। |
সোমবার চিঠি দিয়ে তা চাষিদের জানানো হবে।” চন্দনবাবুর দাবি, ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৩০ একর জমি মাপজোক হয়ে গিয়েছে। মূলত দোফসলি জমি হিসেবেই ওই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত জমিতে যাঁদের বসতবাড়ি রয়েছে, তাঁরা সরকারি মূল্যায়নের পরে সে বাবদও আলাদা টাকা পাবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “২০১০-এ আমরা সরকারি ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, ওই জমির দাম বিঘাপ্রতি আড়াই লক্ষ টাকা। সরকারি নিয়ম মেনে প্রয়োজনে চার গুণ পর্যন্ত বেশি দামে জমি কেনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, ‘ভূমিরক্ষা কমিটি’তে অনিচ্ছুক চাষির সংখ্যা শতাধিক। তাঁদের হাতে রয়েছে প্রায় ৭০ একর জমি। তাঁদের বিরোধিতায় ‘অনভিপ্রেত পরিস্থিতি’ তৈরি হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কর্তারা ‘গ্রিড’-এর কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বার আলোচনায় বসেন। তবে দু’টি জেলা প্রশাসনই ‘গ্রিড’ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, সরাসরি চাষিদের থেকে জমি কিনতে হবে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ওই প্রকল্পটি এলাকার স্বার্থেই জরুরি। তবে প্রশাসন ওই সাব-স্টেশনের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। গ্রিড কর্তৃপক্ষকে চাষিদের থেকে জমি কিনতে বলা হয়েছে।” ‘গ্রিড’-এর নির্ধারিত দরে কি তাঁরা সন্তুষ্ট. এর পরে কি অনিচ্ছুক চাষিরা জমি দেবেন? ‘ভূমিরক্ষা কমিটি’র সভাপতি তথা এলাকার আরএসপি নেতা প্রদীপ সাহার জবাব, “এটুকু বলতে পারি, এখনও অনেক চাষি জমি দিতে অনিচ্ছুক। আশা করব, অনিচ্ছুকদের জমি নেওয়া হবে না। সোমবার এ ব্যাপারে মহকুমাশাসকের (আলিপুরদুয়ার) সঙ্গে কথা বলব। তার পরে সিদ্ধান্ত নেব।” |