স্নাতক সংসদে ছাত্ররা
নয়া বিধির ফাঁসে পরীক্ষার গোপনীয়তা নিয়েই সংশয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নকর্তা কে হবেন, খাতা দেখবেন কোন শিক্ষক এ বার ছাত্ররাও তা জানতে পারবেন। সংশোধিত আইন মেনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সংসদ (ইউজি কাউন্সিল) গঠিত হলে এ রকম পরিস্থিতি হতেই পারে। কারণ এত দিন না থাকলেও নতুন আইনে স্নাতক সংসদে ছাত্র প্রতিনিধিদের রাখার কথা বলা হয়েছে।
কেবল কলকাতাই নয়, রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নয়া আইন প্রয়োগ হলে একই সমস্যা তৈরি হবে। এতে পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা।
বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বেশ কিছু সংশোধন করেছে। সেই সংশোধিত আইনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সংসদে ছাত্রদের তিন জন প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে। কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য শাখার তিন পড়ুয়া নির্বাচিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলি থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, স্নাতক সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রধান পরীক্ষক, অন্য পরীক্ষক এবং প্রশ্নকর্তা নিয়োগ করা। পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া ফল প্রকাশ করাও স্নাতক সংসদের দায়িত্ব। পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কাজই হয় চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনে এই সব কাজ কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে।
দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সংসদের সদস্য থেকেছেন এমন এক শিক্ষক বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ের বোর্ড অফ স্টাডিজ প্রশ্নকর্তা, পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের নাম প্রস্তাব করে সংসদে পাঠায়। সংসদ আলোচনা করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। কাজেই স্নাতক সংসদের সদস্যরা পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক-সহ অন্যান্যদের নাম অবশ্যই জানতে পারেন। নতুন আইন অনুযায়ী সংসদের ছাত্র প্রতিনিধিরাও তা জানতে পারবে।” শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যালও এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, “ভাল ভাবে লেখাপড়া শেখানোর স্বার্থেই ছাত্রছাত্রীদের এই সব ব্যাপার থেকে দূরে রাখা বাঞ্ছনীয়। পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষকের কথা জেনে তারা কী করবে?”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সংসদ তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সংসদের সদস্য নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হবে শীঘ্রই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৩৫টি ডিগ্রি কলেজ থেকে মাত্র তিন জন ছাত্র প্রতিনিধি কী ভাবে বাছা হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, পরীক্ষা পদ্ধতির গোপনীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় সচেষ্ট থাকবে। এক কর্তা বলেন, “ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনে যাতে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা হবে।” তা হলে কি কোনও কোনও বৈঠকে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বারণ করা হবে? নতুন আইনে তার কোনও সংস্থান নেই বলেই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত স্নাতক সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের রাখার সিদ্ধান্ত আদৌ নেওয়া হল কেন? রাজ্য সরকার নিযুক্ত যে উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত নতুন আইন তৈরি হয়েছে, সেই কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার বলেন, “ছাত্র প্রতিনিধি রাখা নিয়েই একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ এতগুলি কলেজ থেকে কী করে নির্বাচনের মাধ্যমে তিন জন ছাত্র প্রতিনিধি বেছে নেওয়া হবে, তা আইনে নির্দিষ্ট করা নেই।” তাঁর আরও বক্তব্য, “স্নাতক সংসদ কি পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত না কি! তা হলে অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের এই কাজ থেকে দূরেই রাখা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা অবশ্য জানান, সেটা করতে গেলে সংশোধিত আইনটি আবার সংশোধন করা ছাড়া গতি নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.