কোথাও টোল আদায় দিন দিন কমছে, কোথাও বা সেতু নির্মাণের খরচ উঠে গিয়েছে বহু দিন আগেই। রাজ্যের বেশ কিছু সেতু থেকে টোল আদায় করে পূর্ত দফতর। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই ওই আদায়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব সরকারের কাছে নেই। এই পরিস্থিতিতে পুরনো সব সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ করতে চলেছে পূর্ত দফতর। পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর ব্যাপারেও আলোচনা চলছে।”
রাজ্যের ন’টি সেতু থেকে টোল আদায় করে পূর্ত দফতর। তার মধ্যে সড়ক বিভাগের হাতে আছে চারটি সেতু। পাঁচটি থেকে টোল আদায় করে পূর্ত ডাইরেক্টরেট। সরকারি নথি বলছে, সড়ক বিভাগের অধীনে যে সেতুগুলো আছে, তার টোল আদায়ের দায়িত্ব অনেক দিন আগেই বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডাইরেক্টরেট নিজের হাতেই রেখেছে টোল আদায়ের দায়িত্ব। এর ফলে ওই সব সেতু থেকে টোল আদায়ের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে বেশ কম। এমনকী, দু-তিনটির পুরো হিসেবও নেই পূর্ত দফতরের কাছে।
যেমন, হুগলিতে আরামবাগ রোডের উপরে মুণ্ডেশ্বরী সেতু। ১৯৭৪ সালে ৭৪ লক্ষ টাকা খরচ করে এই সেতুটি তৈরি করেছিল পূর্ত দফতর। তারপর থেকেই টোল আদায় চলছে। কিন্তু দিন কয়েক আগে টোল আদায়ের পরিমাণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে হতবাক ওই দফতরের কর্তারা। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “২০০৩-০৪ আর্থিক বছরে ওই সেতু থেকে ৮১ লক্ষ টাকা টোল আদায় হয়েছিল। ২০০৯-’১০ সালে সেটাই কমে দাঁড়িয়েছে আট লক্ষে।” ওই পূর্তকর্তার প্রশ্ন, টোলের পরিমাণ না বাড়লেও যেখানে দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে আদায় কমলো কী করে? তা হলে কি সরকারের ঘরে সব টাকা জমা পড়েনি? আবার বীরভূমের ইলামবাজারে ময়ূরাক্ষী সেতু থেকে এ পর্যন্ত কত টোল আদায় হয়েছে, তার সঠিক হিসেব নেই পূর্ত দফতরের কাছে। ১৯৬৬ সালে ওই সেতু তৈরি হয়েছিল। খরচ পড়েছিল ৪২ লক্ষ টাকা। কিন্তু সরকারি নথিতে কেবল গত পাঁচ বছরের হিসেব রয়েছে। তার পরিমাণ ১৬ লক্ষ টাকা। একই অবস্থা বর্ধমানের কৃষক সেতুর ক্ষেত্রেও। ১৯৭৮ সালে ওই সেতু তৈরি হলেও সরকারের কাছে টোল আদায়ের হিসেব আছে ১৯৯৯ থেকে।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের মাতঙ্গিনী সেতু থেকে অবশ্য টোল আদায় পূর্ত দফতর বন্ধ করে দিয়েছে এই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “১৯৮২ সালে ওই সেতু তৈরিতে খরচ পড়েছিল চার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে টোল আদায় হয়ে গিয়েছে সাড়ে ছ’কোটি। সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিতেই ওই সিদ্ধান্ত।”
পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগ সেতুর টোল আদায় তারা নিজেদের হাতে না রাখলেও ওই দায়িত্ব এত বার হাতবদল হয়েছে যে আয় কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “টোল আদায় বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া নিয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। তাতেও আয় মার খেয়েছে।” |