রাজ্যের চিটফান্ড সংস্থাগুলি নিয়ে ‘অনুসন্ধান’ করার দাবি তুলল প্রদেশ কংগ্রেস। শনিবার প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মসমিতির বৈঠকে প্রসঙ্গটি তোলেন দলের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু কোনও গরিব মানুষ টাকা না-পেলে বা গরিব মানুষকে বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তার কারণ অনুসন্ধান করা হোক। রাজ্য সরকারও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুক!”
প্রসঙ্গত, ডালুবাবু ওই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছেন। এ দিন তিনি জানান, বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কিছুদিনের মধ্যে জানাবেন। প্রদেশের বৈঠকেও এ দিন নেতারা দাবি তোলেন, রাজ্য এবং কেন্দ্র যাতে বিষয়টি আলাদা করে তদন্ত করে, সেই মর্মে আবেদন করা হোক।
চিটফান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন তৃণমূলের সাংসদ সোমেন মিত্রও। তিনি চিঠিতে বলেছেন, রাজ্যের চিটফান্ডগুলি আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা জাগিয়ে গ্রামের মানুষের থেকে টাকা তুলছে। ওই চিঠির প্রতিলিপি তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরের কাছেও পাঠিয়েছেন। সোমেনবাবু তারও আগে প্রধানমন্ত্রীকে একই মর্মে চিঠি লিখে রাজ্যের ১৮ টি বৃহৎ চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। |
মৌলালির রামলীলা ময়দানে এক মঞ্চে সোমেন মিত্র ও প্রদীপ ভট্টাচার্য। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
সোমেনবাবুর চিঠির কথা জানাজানি হওয়ার পর এ দিন তৃণমূলের বৈঠকে নাম না-করেই তাঁকে কটাক্ষ করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় (তৃণমূলের অন্দরে যিনি এখন ‘আহমেদ পটেল’ বলে পরিচিত। অর্থাৎ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব ও কংগ্রেসের অলিখিত দু’নম্বর যেমন আহমেদ, মুকুলও তেমনই মমতার ‘আহমেদ পটেল’। তিনি তৃণমূলের দু’নম্বর)।
মমতা-মুকুল দু’জনেই জানান, কোনও সাংসদ যেন দলের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বা দলের নীতি না-মেনে কাউকে চিঠি না-লেখেন। নিজের কেন্দ্রের সমস্যার কথা লিখতেই পারেন। কিন্তু তার বাইরে বৃহত্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কাউকে চিঠি লিখলে দলের নির্ধারিত ‘লাইন’ অনুযায়ী লিখতে হবে। সে ক্ষেত্রে দলের অনুমতিও নিতে হবে। ওই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, চিটফান্ড নিয়ে চিঠিপত্র লেখা তৃণমূলের ‘দলীয় লাইন’ নয়।
সোমেনবাবু অবশ্য বৈঠকে ছিলেন না। ছিলেন না রেলমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত দীনেশ ত্রিবেদীও। মুকুল পরে বলেন, “যাঁরা আসেননি, তাঁরা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি আছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন।”
তবে সোমেনবাবু এ দিনই সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার রামলীলা ময়দানে একটি ‘অ-রাজনৈতিক’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন (ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা ইদ্রিস আলিও)। তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু। ফলে সোমেনবাবুকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে ‘জল্পনা’ শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠান-শেষে প্রশ্ন করায় সোমেনবাবু বলেন, “চিটফান্ড নিয়ে আমার অবস্থান বরাবরই এক যে সব গরিব মানুষ লগ্নি করেছেন, তাঁদের লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকার জিম্মাদার থাকুক।” নয়াদিল্লিতে সংসদের কমিটির বৈঠক থাকায় তিনি তৃণমূল ভবনে যেতে পারেননি জানিয়ে সোমেনবাবু বলেন, “এই কর্মসূচিতে (রামলীলা ময়দানের) থাকার ব্যাপারে অনেক আগেই কথা দিয়েছিলাম।”
অন্য দিকে, ডালুবাবু মহাকরণে জানান, চিটফান্ডের বিষয়ে জন-সচেতনতা গড়তে রাজ্যকে তিনি অনুরোধ জানাবেন। কংগ্রেস সাংসদের কথায়, “তবে এ বিষয়ে রাজ্যের চেয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বই বেশি। প্রধানমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছি। তবে কিছু দিনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানাব।” তাঁর অভিযোগ, চিটফান্ড সংস্থাগুলির বেশির ভাগই তাদের নথিতে অশোকস্তম্ভের প্রতিকৃতি ব্যবহার করে। তারা দাবি করে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) অনুমতিও তাদের রয়েছে। সে সব দেখেশুনে ওই সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করেন এ রাজ্যের, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের অনেকেই। অথচ ওই সংস্থাগুলির কাছে বহু ক্ষেত্রেই ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আরবিআইয়ের লাইসেন্স থাকে না। জমি-গয়না বিক্রি করে চিটফান্ডে টাকা জমা রেখে প্রতারিত হন মানুষ। সুযোগ বুঝে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় ওই সব সংস্থার কর্তৃপক্ষ।
প্রদেশ দফতরে বৈঠকের পর প্রদীপবাবুও বলেন, “চিটফান্ডের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের। পাশাপাশিই আরবিআইয়ের।”
রাজ্য কংগ্রেসের শাখা সংগঠন যুব কংগ্রেসও চিট-ফান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে। যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেছেন, “চিট-ফান্ড নিয়ে নানা দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। রাজ্য সরকার ওই বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে নামব।” |