২১ জুলাই পাল্টা শক্তি দেখানোর ব্রিগেড তৃণমূলের
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ২১ জুলাইয়ের ব্রিগেড সমাবেশ করে সাংগঠনিক ‘শক্তি প্রদর্শন’ করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সিদ্ধান্ত প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের ‘মহড়া’ নেওয়ার জন্যেও বটে।
বিধানসভা ভোটের পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশে যে ভিড় হয়েছিল, তাতে প্রধান বিরোধী দলের নেতারা যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তারই পাল্টা হিসেবে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের জন্য ব্রিগেডকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, সিপিএম-কে হটিয়ে ক্ষমতায় আসার অব্যবহিত পরে গত বছর ২১ জুলাই ব্রিগেডেই ‘বিজয় সমাবেশ’ করেছিলেন মমতা। দলের একাংশের মতে, সরকারের বর্ষপূর্তির পরে-পরেই ব্রিগেডে ‘শহিদ সমাবেশ’ করে মমতা আবার তাঁর ‘লড়াকু’ ভাবমূর্তিতে ফিরতে চাইছেন। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “আমজনতার কাছে মমতা একান্ত ভাবেই এক লড়াকু নেত্রী। আর পঞ্চায়েতে এখনও অধিকাংশ জেলা পরিষদই বামেদের। সেগুলো ছিনিয়ে আনতে দক্ষ প্রশাসকের পাশাপাশি লড়াকু ভাবমূর্তিও সামনে আনা দরকার!” একই সঙ্গে মমতা চান, ‘শহিদ দিবসে’ দলের নেতা-কর্মীদের তাঁদের ‘আত্মত্যাগে’র কথাও মনে করিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে।
শনিবার দলের বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে তৃণমূল ভবনের বৈঠকে মমতা ব্রিগেডের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। পরে ‘আনুষ্ঠানিক’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রেলমন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ওই দিন এত লোক আসেন, যে মেট্রো চ্যানেল বা এসপ্ল্যানেড ইস্টে সভা করলে মানুষের অসুবিধা হয়। তাই ব্রিগেডে সমাবেশ করা হবে।” পঞ্চায়েত ভোটের আগে ব্রিগেডের সভায় দলকে ‘উজ্জীবিত’ করতে, দলের শক্তিবৃদ্ধিতে ‘তৎপরতা’ বাড়ানোর চেষ্টা হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ভোট হবে কি না, তা নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না তৃণমূল। নির্ধারিত সময়ের (আগামী বছরের মে-জুন) আগেই পঞ্চায়েত ভোট করা হবে কি না, তা নিয়েও এ দিনের সভায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মুকুলের কথায়, “ভোট এগোনো হবে কিনা, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” প্রসঙ্গত, মুকুল নিজেই অবশ্য প্রকাশ্যে ভোট এগোনোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা নিজে ভোট এগোতে চান না একটি জমিদাতা পরিবারকে যা দিতে হবে, তা সরকারের কোনও দফতরের পক্ষে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। এ বার ক্ষতিপূরণ আরও বাড়ানোর দাবি উঠলে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় শিল্পমহল। যদিও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁদের অবস্থান কোনও ভাবেই শিল্পায়নের পক্ষে ‘বাধা’ হবে না। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ চলবে না এমন কোনও অবস্থান আমরা নিইনি। আমরা জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দিকটা নিশ্চিত করার কথা বলছি।”
‘ভূমি সংস্কারের দাবি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি শনিবার পার্টি কংগ্রেসে পেশ করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বিগত বাম মন্ত্রিসভায় পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্বে থাকা এবং দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে জমি-কেন্দ্রিক ঘটনাবলী ও সমস্যা সম্পর্কে যিনি সম্যক অবহিত। ভূমি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়েই সূর্যবাবুর পেশ করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৮৯৪ সালের ‘দানবীয়’ জমি অধিগ্রহণ আইন বদলে প্রস্তাবিত যে আইনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ‘বলপূর্বক অধিগ্রহণে’র মুখে কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত ‘রক্ষাকবচ’ নেই। প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন স্তরে ১৬টি আইনের কথা উল্লেখ করে ওই বিলে বেশ কিছু ‘ছাড়’ দিতে চাওয়া হয়েছে। যার ফলে খনি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড), রেল বা জাতীয় সড়কের জন্য জমি নেওয়া হলে বিলে উল্লিখিত ক্ষতিপূরণের সংস্থান কার্যকর হবে না। ‘কৃষক স্বার্থে’ই ওই প্রস্তাবিত বিল নতুন করে খসড়া করা এবং তার জন্য কৃষক ও আদিবাসীদের ‘গণতান্ত্রিক সংগঠন’গুলির সুপারিশ খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘কৃষক স্বার্থে’র কথা ভাবতে গিয়ে তাঁরা যে অবস্থান নিলেন, তা কি তৃণমূল নেত্রীর কাছাকাছিই তাঁদের এনে ফেলছে না? পলিটব্যুরোর সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ইয়েচুরি এ দিন পার্টি কংগ্রেসের বিতর্কের ফাঁকে আনন্দবাজারকে বলেছেন, “বিষয়টা তেমন নয়। তৃণমূল নেত্রী জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকার বিরোধী। আমরা কিন্তু অধিগ্রহণে সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে। আমরা বরং জোর দিচ্ছি পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে। তফাত এখানেই।”
ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, “জমির মালিকানা যাঁদের হাতে, আমরা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এগোনোর কথা বলছি। কিছু ক্ষেত্রে (প্রস্তাবে যেমন বলা হয়েছে) ক্ষতিপূরণের শর্ত কার্যকর হবে না, এরই বা যুক্তি কী? এমনিতেই কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পর্যাপ্ত নয়। যেখানে জমি নিতে হবে, সেখানে সম্ভাব্য ‘স্টেকহোল্ডার’দের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নতুন প্রকল্পে জমিহারাদের সামিল করতে হবে। এটাই আমাদের বক্তব্য।”
গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ রাজ্যই ভূমি সংস্কারের কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে না। গরিব, ভূমিহীনদের মধ্যে জমি বিলি হচ্ছে না। ভূমি সংস্কারের এই কাজ এখন দেশের একমাত্র বামশাসিত রাজ্য ত্রিপুরার সরকার করছে, যা আগে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের বাম সরকারই শুধু করেছে। প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য হল, ‘ল্যান্ড মনোপলি’ বা অল্প কিছু লোকের হাতে জমি কুক্ষিগত হয়ে থাকার বিষয়টি ভাঙতে পারলে তবেই গরিবের ‘মুক্তি’র পথে এগোনো সম্ভব। প্রতিবন্ধীদের অধিকার এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করার দাবিতে আরও দু’টি প্রস্তাব পাশ হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের চতুর্থ দিনে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবে কিছু রাজ্যে জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। প্রস্তাবে নাম না-করলেও গত ১০ মাসে পশ্চিমবঙ্গে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে বারবার এই অভিযোগ তুলেছেন সূর্যবাবুরা। আবার প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়েছে, কর্পোরেটদের হাতে জমি তুলে দিতে সচেষ্ট বেশ কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় যে অভিযোগে বহু বার সরব হয়েছেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা!
অর্থাৎ মমতার প্রতি দোষারোপ অব্যাহত থাকলেও সিপিএম আপাতত ঘুরেফিরে সেই মমতারই ‘পথে’!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.