উত্তরপ্রদেশের হার নিয়ে ‘আনুষ্ঠানিক’ সমীক্ষায় তোপের মুখে পড়ার আগেই কৌশলী পদক্ষেপ করছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিতে চান তিনি। গডকড়ী চাইছেন, হাতে গোনা কয়েক জন প্রথম সারির নেতাকে বাদ দিয়ে দলের বাকি সব নেতার দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। বুথ স্তরে পড়ে থেকে নেতারা যেন এখন থেকেই ভোটের কাজ শুরু করে দেন।
প্রায় দু’বছর আগে সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি গোটা দেশ সফর করেছেন। কিন্তু তাতেও একের পর এক নির্বাচনে সে ভাবে সাফল্য আসেনি। গডকড়ী জানেন, নির্বাচনে হারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হলেই তিনি অন্য নেতাদের তোপের মুখে পড়বেন। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দলের নেতাদের ক্ষোভ রয়েছে। সে রাজ্যে ভোটের কাজ একেবারে শেষ মুহূর্তে কেন শুরু করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ জন্য সেই বৈঠকের আগেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নিচ্ছেন গডকড়ী। ভোটে জেতানোর দায় যে সকলের, সভাপতির একার নয়, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই বার্তাও দিতে চান তিনি।
সভাপতি হওয়ার পরেই গডকড়ী নির্দেশ দিয়েছিলেন, সব নেতাকেই মাসে অন্তত দশ দিন রাজ্য সফর করতে হবে। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয়নি। গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ জানান, উত্তরপ্রদেশের ভোটের ভরাডুবি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শেষ মুহূর্তে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও কোনও লাভ হয় না। |
প্রয়োজন হল তৃণমূল স্তরে গিয়ে বসে থাকা। তা হলেই বাকি কর্মীরা উৎসাহ পাবেন। তাঁর উদাহরণ, স্কুলের টিফিনের পর হেডমাস্টার যদি এক বার টহল দেন, তা হলেই ছাত্রছাত্রীরা চুপচাপ নিজেদের ক্লাসে চলে যায়। দেশের প্রতিটি বুথে বিজেপির এমন এক জন করে হেডমাস্টার প্রয়োজন।
উত্তরপ্রদেশের হারের বিষয়ে রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। এখন থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্যও তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু একের পর এক পদক্ষেপে দলের নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে গডকড়ী এখন কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারছেন না। বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন স্বীকার করেন, “উত্তরপ্রদেশের হারের পর্যালোচনা হোক বা ইয়েদুরাপ্পার সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, আপাতত সব সিদ্ধান্তই স্থগিত হয়ে রয়েছে।”
বিজেপি নেতাদের মতে, তার কারণ একটাই। উত্তরপ্রদেশের কৌশল, বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে নেওয়া, সঞ্জয় জোশীকে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া, উমা ভারতীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করতে না পারা, বাকিদের মতামত উপেক্ষা করে ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যসভায় অংশুমান মিশ্রকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে গডকড়ীর কর্তৃত্ব। এ সবের মধ্যে সভাপতি হিসাবে গডকড়ীর মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটিও ঝুলে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্ঘ নেতৃত্বও এখন গডকড়ীকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই লোকসভার প্রস্তুতির মোড়কে গডকড়ী এক দিকে যেমন সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাইছেন, তেমনই সকলের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে ভবিষ্যতে জয় বা পরাজয়ের দায়ও সুকৌশলে ভাগ করে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করতে চাইছেন। |