রাহুলের দেখানো পথে এ বার হাঁটার ইঙ্গিত সনিয়ারও! সংগঠনের হাল ধরতে রাহুল গাঁধীর দেখানো পথই অনুসরণ করতে চাইছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
উত্তরপ্রদেশের ভোট বিপর্যয় ও সাংগঠনিক দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে সেখানে বিধানসভা ভোটে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের পাশাপাশি দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গত দু’দিন ধরে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন রাহুল গাঁধী। তার পরেই আজ কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হয়, রাহুলের ‘মডেল’ অনুসরণ করেই এ বার রাজ্যওয়াড়ি সাংগঠনিক দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে এ ধরনের বৈঠক ডাকতে চাইছেন সনিয়া। হাইকম্যান্ডের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, রাহুলের এ ধরনের বৈঠক কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেনজির। ভোটে বিপর্যয়ের পর অতীতে কখনওই এ ভাবে নিচুতলার কর্মী ও প্রার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেনি হাইকম্যান্ড। অথচ এ ধরনের বৈঠক নিচুতলার কর্মীদের মনোবল বাড়াতে পারে বলেই মনে করেন অনেক নেতা। তা ছাড়া, এ ধরনের বৈঠক রাজ্য ও কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীদের কাজের মধ্যে রাখার ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে বৈঠকের পর শুধু যে ‘অকর্মা’ নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাহুল তা নয়, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গড়েছেন তিনি। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও সুশীল কুমার শিণ্ডেকে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশের প্রদেশ কমিটির পুনর্গঠন হবে।
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থীদের পাশাপাশি ডাক পেয়েছিলেন কুড়ি হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে হারা প্রার্থীরাও। এমনকী গত লোকসভা এক লক্ষের বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীদেরও ডাকা হয়েছিল। রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের আগে গত কাল তাঁরা কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। সনিয়ার কাছেও তাঁরা দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ওই বৈঠকের পর সনিয়াও বুঝতে পারছেন এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে তিনি রাজ্যওয়াড়ি সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘ফার্স্ট হ্যান্ড’ তথ্য পেতে পারেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কতটা দায়িত্ব পালন করছেন, তা-ও জানা যেতে পারে। দেড় বছর আগে বুড়ারির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন থেকেই বার বার সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন সনিয়া। কিন্তু তাতে এখনও বিশেষ ফল মেলেনি। হাইকম্যান্ড মনে করছে, লোকসভা ভোটের আগে এই রাহুল-মডেল মেনে চললে তার সুফল মিলবে। উপযুক্ত নেতা নির্বাচনও সহজ হবে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে স্বজনপোষণের রাজনীতিও অনেকটাই দমন করা যাবে বলে মনে করছে হাইকম্যান্ড।
দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এমনিতেই সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন রাজ্যওয়াড়ি সাংগঠনিক রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের বৈঠক হলে সংগঠনেরই ভাল হবে। তিনটি রাজ্য এই মুহূর্তে দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গুলি হল গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটক। এই তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তবে কংগ্রেসেরই এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের হাল ফেরানোর ব্যাপারটি রাহুল চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছেন বলে তিনি মনোযোগ দিয়ে এ ধরনের বৈঠক করছেন। কিন্তু সনিয়ার পক্ষে এমন রাজ্যওয়াড়ি বৈঠক করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। |