কোঝিকোড়েও তিনি সিপিএমের পিছু ছাড়ছেন না! না কি সিপিএম কোঝিকোড়ে বসেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ভুলতে পারছে না! পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে দলের মালায়ালম মুখপত্র ফি-সন্ধ্যায় বিশেষ বুলেটিন বার করছে। শুক্রবারের প্রথম পাতার কার্টুনে দেখা মিলল তৃণমূল নেত্রীর। সংবাদমাধ্যমের উপরে ‘ফতোয়া’ জারি করা নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে তাঁকে। কার্টুনে মমতা বলছেন, ‘আমি নিশ্চিত, মিডিয়া সব মিথ্যে বলছে। কারণ সব সত্যি তো আমি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছি’!
|
কোঝিকোড়ের জেলা সমবায় হাসপাতালের ডিরেক্টর, শহরের নামজাদা চিকিৎসক এ সি বিজয়শঙ্কর তাঁর পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছেন। পার্টি কংগ্রেসে চলে এসেছিলেন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “বেশ মনে আছে, ১৯৬৪ সালের কথা। আমরা দু’জনেই তখন মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ স্কুলে পড়ছি। স্কুলে ইংরেজি রচনা প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হয়ে ও টোকিওতে অলিম্পিক দেখতে যাওয়ার সুযোগ পেল।” রচনার বিষয়বস্তু? জয়প্রকাশ নারায়ণ। ফার্স্ট হওয়া সেই বন্ধুর নাম? প্রকাশ কারাট। স্কুলে যাঁকে সবাই চিনত প্রকাশ কে নামে। বিজয়শঙ্কর অবশ্য তখন জানতেনই না প্রকাশ মালায়ালি। কারণ ইংরেজি ছাড়া কোনও দিনও তাঁকে একটিও মালয়ালি শব্দ বলতে শোনা যায়নি যে! পার্টি কংগ্রেসের পরে সময় পেলে এক দিন মধ্যাহ্নভোজনের আমন্ত্রণ রয়েছে। শর্ত একটাই। সঙ্গে বৃন্দাকে নিয়ে আসতে হবে।
|
প্রথম বার ২০০৩ সালে এসএফআইয়ের সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে। তার পরে ২০১০ সালে এসএফআইয়ের কেরল রাজ্য সম্মেলনে নেতা হিসাবে। এ বার ২০১২ সালে দলের পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধি হিসাবে। তিন বারই সম্মেলন হয়েছে একই জায়গায়। রেড ক্রস রোডের টেগোর সেন্টিনারি হল! এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোঝিকোড় সফরের হ্যাটট্টিকের কথা জেনে বেশ আমোদিত বাঙালি প্রতিনিধিরা। শহরটার কোথায় কী, সম্মেলনের হলেরই বা কোথায় কী, এক কথায় বাতলে দেওয়ার একটা লোক হাতের কাছে পাওয়া গিয়েছে! আবার কেরলের কমরেডরাও ভাবছেন, তাঁদের চেনা লোক এসেছে!
|
দেশের সর্বত্র সিপিএমের গণ-সংগঠন না থাকলে কী হবে, ব্রিটেন ও কানাডায় সিপিএমের শাখা রয়েছে। সেই শাখার প্রতিনিধিরাও পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধি হিসেবে হাজির। লন্ডন থেকে হারসেভ বেন্স, কানাডা থেকে সুরিন্দর সিংহ। এ বার পার্টি কংগ্রেসে কোনও বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু দলের বিদেশি শাখার সদস্যদের জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন থেকেই চেয়ার সংরক্ষিত আছে। এমন নয় যে, তাঁরা চুপ করে বসে থাকছেন। রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে দু’জনেই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। শনিবার আবার মতাদর্শগত দলিলে মত জানিয়েছেন হারসেভ। এক নেতার রসিকতা, “হিন্দি বলয়ে পার্টি উঠে গেলে কী হবে, আমাদের সংগঠন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ কি চাট্টিখানি কথা!”
|
গলায় প্রতিনিধির লাল কার্ড। কাঁধে ব্যাগ। হাতা গোটানো শার্ট। নীচে মালায়ালি ‘মুন্ডম’। দক্ষিণ ভারতের কোনও প্রতিনিধি বলে অনায়াসে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু পরিচিত জনেদের সঙ্গে কথা বললেই ভুল ভাঙছে! ইনি তো খাঁটি বাঙালি। আদতে মেদিনীপুরের লোক। তাপস সিংহ! ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক এবং অধুনা দিল্লি-নিবাসী। এই বেশে? তাপসবাবুর জবাব, “সব সময় বাঙালি-বাঙালি করলে চলবে! আমি তো সর্বভারতীয় দলের একটা সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক! তাই ভারতীয় হিসেবে স্থানীয় পোশাকে।” তাপসবাবুর ‘সুপ্রিম বস’ প্রকাশ কারাটও অবশ্য পার্টি কংগ্রেস উদ্বোধনের দিনে মালায়ালি পোশাকেই ছিলেন। নিজের রাজ্য কেরল তাঁকে যে বেশে প্রায়শই দেখে। কিন্তু তাপসবাবু আস্ত চমক! |