চোরাই লোহা বিক্রিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে রানিগঞ্জের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক হারাধন ঝা-র স্ত্রী এবং এক ফেরিওয়ালাকে ধরল পুলিশ। সিপিএমের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই নেতার স্ত্রীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তবে পুলিশ, ইসিএল এবং তৃণমূল তা উড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রানিসায়র দাগা এলাকায় নিজের বাড়িতেই এক ফেরিওয়ালার কাছে লোহা বিক্রি করছিলেন হারাধনবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মী ঝা। এলাকার লোকেদের কাছে খবর পেয়ে পিওর সিহারশোল কোলিয়ারির এক নিরাপত্তারক্ষী গিয়ে তা আটকান। বাড়ি ঘিরে লক্ষ্মীদেবীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তৃণমূল।
পরে ইসিএল সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লোহা বাজেয়াপ্ত করে। ফেরিওয়ালা শেখ বাবলুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। খানিক বাদে পিওর সিহারশোল কর্তৃপক্ষ রানিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁদের খনি থেকে চুরি যাওয়া লোহা অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছিল। ইসিএলের কারিগরী সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “কোলিয়ারির ম্যানেজার নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নিয়েই অভিযোগ দায়ের করেছেন।” দুপুর ৩টে নাগাদ পুলিশ লক্ষ্মীদেবীকে গ্রেফতার করে। |
গত বিধানসভা ভোটে রানিগঞ্জ আসনটি তৃণমূলের দখলে যাওয়ার আগে পাঁচ বছর সেখানকার বিধায়ক ছিলেন হারাধনবাবু। বর্তমান বিধায়ক সোহরাব আলির অভিযোগ, “বেশ কয়েকদিন ধরেই হারাধনবাবুর প্রতিবেশীরা দেখছিলেন, তাঁর স্ত্রী দেড়-দু’শো কেজি করে লোহা বিক্রি করছেন। গৃহস্থ বাড়িতে এত লোহা কী করে এল?” হারাধনবাবু দাবি করেছেন, “সম্প্রতি বাড়িতে নতুন করে গ্যারাজ, রান্নাঘর ও শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। কিছু লোহা বেঁচেছিল। আমার স্ত্রী সেই লোহা আর ভাঙা প্লাস্টিকের জিনিস ফেরিওয়ালাকে দিচ্ছিলেন। তখনই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু লোক এই অপবাদ দেয়।”
নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সাধন সিংহ বললেন, “বাড়ির উঠোনে ফেরিওয়ালা ডেকে ২০ ফুটের একটি লোহার পাত টুকরো করিয়ে বিক্রি করছিলেন লক্ষ্মীদেবী। পাড়া-পড়শিরা তা দেখে ইসিএলে খবর দেন।” তাঁর দাবি, “হারাধনবাবুর পরিবারের কেউ কেউ যে লোহার অবৈধ কারবারে যুক্ত, তা সবাই জানে। এ নিয়ে এলাকায় দীর্ঘ দিন ক্ষোভও রয়েছে।”
সিপিএম নেতারা অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করছেন, রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই রানিগঞ্জে লোহা চুরির রমরমা বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ আসল অপরাধীদের না ধরে শাসকদলের চাপে তাদের লোকেদের ফাঁসাচ্ছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অনুযোগ, “বিরোধী কর্মীদের তো বটেই, তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোহার কারবার কার নেতৃত্বে চলছে, আসানসোলের মানুষ তা জানেন।”
বিধায়ক সোহরাব আলি পাল্টা বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওরা আমাকেও দুষ্কৃতী বলে দেগে দিয়ে পোস্টার দিয়েছিল। মানুষ কিন্তু তা বিশ্বাস করেননি।” তাঁর চ্যালেঞ্জ, “লোহার কারবার সম্পর্কে সিপিএম যদি সবই জানে, নির্দিষ্ট অভিযোগ করুক।” আসানসোল পুলিশের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “লোহা চুরি আটকাতে নিরন্তর অভিযান চালানো হচ্ছে।” |