আধিকারিকদের বদলি ও দায়িত্ব রদবদলের নির্দেশকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে। ইতিমধ্যে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নির্দেশ চিঠি দিয়ে কার্যকরী না-করতে বলেছেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়। চেয়ারম্যানের দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত সংস্থার কর্মী সংগঠনের তরফে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অপসারণ চেয়েও আন্দোলন শুরু হয়েছে। যদিও পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ তাঁর বিরুদ্ধে চলা আন্দোলন এবং চেয়ারম্যানের আপত্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “নিগমের কাজে গতি আনতে কিছু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার বিষয়ে চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়েছি। যদিও সেটা সম্ভব নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” এ দিকে তিক্ততা বেড়ে চললেও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নির্দেশ নিয়ে মুখ খোলেননি নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “ওই বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না।” নিগম সূত্রের জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর গত ৩ এপ্রিল তিন পদস্থ আধিকারিককে বদলির নির্দেশ জারি করেন। ওই পদস্থ আধিকারিকরা হলেন সংস্থার রায়গঞ্জ ও কোচবিহারের বিভাগীয় ম্যানেজার এবং কোচবিহার পরিবহণ ভবনের একজন সহকারি ম্যানেজার। রায়গঞ্জ বিভাগীয় ম্যানেজার সুবীর দেবরায়কে কোচবিহারের স্টোর অ্যান্ড পারচেস বিভাগে বদলি করা হয়। অন্যদিকে কোচবিহার বিভাগীয় ম্যানেজার সুবীর সাহাকে রায়গঞ্জ বিভাগে বদলি করা হয়। কোচবিহার পরিবহণ ভবনে কর্মরত সহকারি ম্যানেজার সুপ্রিয় দত্তকে বদলি করা হয় বহরমপুরে। দায়িত্ব রদবদলের নির্দেশে কোচবিহারের বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার সুব্রত বিশ্বাসকে বিভাগীয় ম্যানেজার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিগমের ভারপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার পল্লব ভৌমিককে দেওয়া হয় নিউ কোচবিহার সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপের অতিরিক্ত দায়িত্ব। ডেপুটি কন্ট্রোলার অফ স্টোর অ্যান্ড পারচেস কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়কে পরিবহণ ভবনের সহকারি ম্যানেজারের বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলা হয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ওই নির্দেশ জানাজানি হতেই সংস্থা কর্মী ও আধিকারিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ৫ এপ্রিল নিগম চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে বদলির পাশাপাশি আধিকারিকদের দায়িত্ব রদবদলের সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলেন। প্রকাশ্যে ওই বিষয়ে নিগমের চেয়ারম্যান মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ঘটনা নিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ভূমিকায় ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভের কথা জানান। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, চেয়ারম্যান শিলিগুড়ির এক পদস্থ আধিকারিককে কোচবিহারে স্টোর অ্যান্ড পারচেস বিভাগের দায়িত্বে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে পরামর্শ না-করে ম্যানেজিং ডিরেক্টর অন্য এক আধিকারিককে ওই দায়িত্বে বদলির নির্দেশ জারি করেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক আধিকারিককে কেন বদলির তালিকায় রাখা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নিগমের তৃণমূল কর্মী সংগঠন। ওই ঘটনা নিয়ে দুই শীর্ষ কর্তার বিরোধের সূত্রপাত বলে নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে। চেয়ারম্যান চিঠি দিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে দায়িত্ব রদবদলের সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলায় তা আরও বেড়ে যায়। ঘনিষ্ঠ মহলে চেয়ারম্যান জানান তাঁকে না জানিয়ে এ ভাবে বদলি ও দায়িত্ব রদবদলের নির্দেশ জারি করে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঠিক করেননি। এ দিকে নিজের অবস্থানে অটল ম্যানেজিং ডিরেক্টরও। ঘনিষ্টমহলে তিনিও জানিয়েছেন, প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টন ও বদলির বিষয় তার এক্তিয়ার ভুক্ত। ওই বিষয়ে তিনি পরিচালন বোর্ডের সভায় ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত। চেয়ারম্যান চিঠি দিলে তিনি সেটা মানতে বাধ্য নন। যদিও নিগমের ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রহমান কোনও রাখঢাক রাখেননি। তিনি বলেন, “ম্যানেজিং ডিরেক্টর মর্জিমাফিক কাজ করছেন। চেয়ারম্যানকে না-জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বদলির ব্যাপারেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেননি। আমাদের মনোভাবাপন্ন এক আধিকারিককে বদলি তালিকায় রাখা হয়েছে। এটা মানা হবে না। ওই এমডিকে সরিয়ে পূর্ণ সময়ের এমডি নিয়োগের দাবির কথা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। ওই দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।” সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত মোবাইল না তোলায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। |