‘বিপদ’ মাথায় নিয়ে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসছেন রোগীরা।
সেই ‘বিপদ’ হাসপাতালের পুরনো ভবন। যা প্রশাসনের মতে ‘বিপজ্জনক’। এ সক্রান্ত বোর্ডও লাগানো হয়েছে ভবনের গায়ে। কিন্তু আদালতে মামলার কারণে ভবনটির সংস্কার করা যাচ্ছে না। আর ওই ভবনের সামনে দিয়েই রোগীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে নতুন ভবনে। যে কোনও সময়ে পুরনো ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা নিরুপায়।
ফরাসি আমলের শহর চন্দননগরে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে ঐতিহ্যশালী বহু পুরনো বাড়ি। তার মধ্যে চন্দননগর হাসপাতালের পুরনো ভবনটিও রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনটিতেই ফরাসি আমলে প্রথম হাসপাতাল চালু হয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় আগে পর্যন্ত এই ভবনটিই ছিল মূল মহকুমা হাসপাতাল। ভবনটি ঐহিত্যবাহী হওয়ায় হেরিটেজ কমিশন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেটির রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন শেষ পর্যন্ত আদালতের চৌহদ্দিতে গড়ায়। আর তার জেরেই বছরের পর বছর ধরে ওই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। |
ভবনটির গা-ঘেঁষেই নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। সেখানেই যাবতীয় চিকিৎসা চলে। পুরনো ভবনের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স। ওই ভবনের সামনে দিয়ে রোগীর বাড়ির লোকজন যাতায়াত করেন। বিপদ থেকে বাঁচতে পুরনো ভবন এড়িয়ে যাওয়ার কার্যত কোনও উপায় নেই। ওই ভবনের একাংশে এখনও মর্গ রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে ময়না-তদন্ত হয় না। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের। কিন্তু এখনও সেখানে মৃতদেহ রাখা হয়। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাড়িটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় সেটির কাঠামো এখন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই বাড়িটির এক একটি অংশ খসে পড়ে। তার ফলে প্রতিদিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে বাড়িটি।
হরিপালের প্রত্যন্ত গ্রাম দুইল্যার বাসিন্দা প্রশান্ত বায়েনের মা ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ৯ দিন ধরে হাসপাতালে আসছেন প্রশান্তবাবু। পুরনো ভবনটি দেখে তিনি আতঙ্কিত। তাঁর কথায়, “সব সময় ভয় হয়, এক জনকে সুস্থ করতে এসে নিজে না ভাঙা বাড়ির নীচে চাপা পড়ে মরি।” আর এক রোগীর আত্মীয় বলেন, “ভবনটিকে দেখলেই ভয় করে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
জেলা প্রাশাসন সূত্রের খবর, পুরনো ভবনটির নির্মাণে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, বর্তমানে সে ভাবে সংরক্ষণে সমস্যা রয়েছে। কারণ হিসেবে প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, সেই পরিকাঠামো তাঁদের হাতে নেই। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, বাড়িটির বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে এ ভাবে আরও কিছুদিন চললে ভবনটি মাটিতে মিশে যাবে। হাসপাতালের সুপার অসীমকুমার প্রামাণিক বলেন, “বাড়িটি বিপজ্জনক এটা সত্যি। আমরা বিষয়টি পূর্ত দফতর, জেলাশাসক এবং হেরিটেজ কমিশনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারিনি।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “ভবনটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। যে হেতু বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন সে হেতু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” |