পুরসভার মাতৃসদনে নিয়োগে অনিয়ম
শংসাপত্রে নিজের সই, অভিযোগ
বালুরঘাট পুরসভার মাতৃসদনে চিকিৎসক পদে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে শংসাপত্র খতিয়ে না-দেখেই এক ব্যক্তিকে। পাঁচ মাস আগে অম্লান রায় নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে ‘এমবিবিএস ও এমডি’ বলে দাবি করে শংসাপত্রের জেরক্স জমা দিয়ে মাতৃসদনের চিকিৎসক পদে যোগ দেন। সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শংসাপত্র নিয়ে ওই চিকিৎসককে দেখাও করতে বলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌরব রায়। বৃহস্পতিবার ফের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে মাতৃসদনের ওই চিকিৎসকের শংসাপত্র চেয়ে পুরসভায় চিঠি পাঠানো হয়। তাতেই সন্দেহ দানা বেধে ওঠে। ওই চিকিৎসকের আর কোনও খোঁজ মিলছে না বলে অভিযোগ। শংসাপত্র ভাল করে খতিয়ে না-দেখেই কেন ওই চিকিৎসককে পুর কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছিলেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাসের বক্তব্য, চিকিতসক ‘সেলফ অ্যাটেস্টেট’ করে শংসাপত্রের জেরক্স জমা দিয়েছিলেন। শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের সঙ্গে ওই চিকিৎসক জড়িত বলে জানতে পেরে তাঁর সন্দেহ হয়নি বলে পুর চেয়ারপার্সনের দাবি। তিনি বলেন, “অভিযোগ পেয়েই চিকিৎসকের মার্চ মাসের বেতন আটকে দেওয়া হয়েছে। ২ এপ্রিল ওই চিকিৎসককে চিঠি দিয়ে ১০ তারিখের মধ্যে সমস্ত নথিপত্র দাখিলের নোটিশও দেওয়া হয়। নথিপত্র জমা না দিলে মাতৃসদনে তাঁর চাকরির চুক্তি বাতিল হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।” এই ব্যাপারে দায় এড়িয়ে গিয়েছেন পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক অমিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মাতৃসদনে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি পুরপ্রধান দেখেন। আমার কিছু জানা নেই।”
নির্মাণ কাজ চলছে বালুরঘাট পুরসভার হাসপাতালে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
পুর কর্তৃপক্ষের ওই যুক্তি মানতে রাজি নন শহরের তৃণমূল নেতারা। দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় পুরসভার ভুমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক প্রবীর রায় অভিযোগ করেন, “সরকারি চিকিৎসকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েও হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। এখন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে নিজেদের দোষ আড়াল করতে চাইছেন।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসও মনে করেন, পুর কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, “ওই চিকিৎসকের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য পুরসভার উচিত ছিল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো। ওই চিকিৎসক মেডিক্যাল কাউন্সিলে নথিভুক্ত কি না তা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে জেনেই নিয়োগ করতে হত।” জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী জানান, ইতিমধ্যেই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিযোগের তদন্তে নেমেছেন। তিনি বলেন, “রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিলে যোগাযোগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই চিকিৎসক কোনও নথি জমা দেননি। দেখাও করেননি।” শুক্রবার ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে দেখা যায় তাঁর দুটি মোবাইলই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে তাঁর কাকা বীরেশ রায় বলেন, “অম্লান নেপালে পড়াশোনা করেছে। এখন কোথায় আছে জানি না। ভুয়ো শংসাপত্র জমা দিয়েছে কি না তাও বলতে পারব না।” এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই চিকিৎসক নিজেকে ‘এইমসে’র ডাক্তার’ বলে পরিচয় দিতেন। বালুরঘাট শহরের তিনটি জায়গায় এবং তপন হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। বছর চল্লিশের ওই চিকিৎসক গত বছরের ১১ নভেম্বর পুরসভার মাতৃসদনে কাজে যোগ দেন। ওষুধের দোকানগুলিতে তিনি নিজেকে মালদহের রতুয়া থানার বাহারাল গ্রামের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। এদিন ওই ওষুধের দোকানের জেরক্স শংসাপত্র থেকে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া থেকে তাঁর পাওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানা গেলেও ওয়েবসাইটে অম্লান রায় নামে ওই নম্বরে কোনও চিকিৎসকের হদিশ মেলেনি। রঘুনাথপুরের একটি নার্সিংহোমের মালিক স্বপন মজুমদার বলেন, “আমার নার্সিংহোমের সঙ্গে অম্লানবাবু যুক্ত ছিলেন না। উনি যোগাযোগ করলে আমার ওষুধের দোকানে বসে প্র্যাকটিশ করার চুক্তি হয়। সেসময় তিনি শংসাপত্রের জেরক্স জমা দিয়েছিলেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফত থেকে তাঁর ডিগ্রি সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে আসল কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিছুই জমা দেননি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.