|
|
|
|
কাল বৈঠকে পার্থ |
বন্ধ নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গেই পৃথক আলোচনায় বসছে রাজ্য |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
বন্ধ-পাল্টা বন্ধের হুমকিতে ক্রমশ তেতে ওঠা তরাই-ডুয়ার্সের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও মোর্চা-বিরোধীদের নিয়ে পৃথক ভাবে আলোচনায় বসছে রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, কাল, রবিবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে ‘আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’ নেতৃত্বাধীন ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে থাকার কথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবেরও। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এ তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্তির দাবির বিরোধিতায় ১০ এবং ১১ এপ্রিল তরাই-ডুয়ার্সে বন্ধ ডেকেছে কমিটি। পাশাপাশি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন ‘যৌথ মঞ্চ’ ১৮ ও ১৯ এপ্রিল তরাই-ডুয়ার্সে যে পাল্টা বন্ধের ডাক দিয়েছে, তা-ও প্রত্যাহার করানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে মঞ্চ নেতৃত্বকে অনুরোধ করা হবে।
তবে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র আহ্বায়ক তথা পরিষদের নেতা তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকায় জিটিএ-তে যাবে না, এমন স্পষ্ট আশ্বাস পেলেই আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরার কথা ভাবব।” পক্ষান্তরে ‘যৌথ মঞ্চ’-এর অন্যতম নেতা শুকরা মুণ্ডা জানান, তাঁরাও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বলেন, “কমিটি বন্ধ তোলে কি না সেটা দেখব। ওঁরা তুললে আমরাও বন্ধ প্রত্যাহার করব।” সরকারি সূত্রের খবর, কমিটির ‘অনড়’ মনোভাবের কথা জানলেও রাজ্য সরকার এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে না। সরকার বরং আলোচনার মাধ্যমে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার উপায় খুঁজতে চাইছে।
শুক্রবার শিল্পমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। সেই উন্নয়নে বাধা দিতে নানা চক্রান্ত হচ্ছে। রাজ্য সরকার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ করে উন্নয়নে আরও গতি আনতে বদ্ধপরিকর। উত্তরবঙ্গে গিয়ে সকলকেই উন্নয়নে সামিল হওয়ার অনুরোধ করব।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী জানান, তিনি আগে দু’পক্ষকেই বন্ধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “এ বার শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে। না হলে পাহাড়-সমতলের উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটবে। আশা করি, সকলে বিষয়টি বুঝবেন।”
বস্তুত, জিটিএ-চুক্তির পরে পাহাড়ের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ‘স্বাভাবিক’ হয়েছে। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি মেনে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা জিটিএ-র আওতায় আনার দাবি খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে সমতলের নানা জায়গায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ‘আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’, ‘কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি’, ‘আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চ’, ‘জনজাগরণ মাল’, ‘বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটি’-সহ ১৯ সংগঠন মিলে তৈরি হয়েছে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। মোর্চার নেতৃত্বাধীন ৩২টি সংগঠনের ‘যৌথ মঞ্চ’ কমিটির ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ফের বন্ধের রাজনীতির ‘জাঁতাকলে’ পড়ার আশঙ্কায় পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। কারণ, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমের গোড়ায় পর পর বন্ধ হলে পর্যটকেরা পাহাড়-ডুয়ার্স থেকে মুখ ফেরাবেন, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার উপরে নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনায় এবং প্রথম বৃষ্টির পরে যে চা পাতা বাগান থেকে তোলা হয়ে থাকে (ফার্স্ট ফ্লাশ), তার উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনাও থাকছে। সব মিলিয়ে পাহাড়-সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকার অর্থনীতি ফের কিছুটা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের সঙ্গে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ এবং ‘যৌথ মঞ্চ’-এর নেতৃত্বের বৈঠকে কী হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল। |
|
|
|
|
|