কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্যের আইন বলছে, জনস্বার্থে কোথাও বিদ্যুতের টাওয়ার বসাতে গেলে যদি কৃষিজাত শস্যের ক্ষতি হয় বা ঘর-বাড়ি ভাঙা পড়ে, তা হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আবার ওই আইনেই বলা আছে, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য টাওয়ার বসিয়ে লাইন নিয়ে যেতে গেলে কোথাও কোনও জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। এমনকী কেনাও যাবে না। তাই কোনও ব্যক্তির জমিতে টাওয়ার বসাতে হলে জমি বাবদ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও নির্দেশিকা ভারতীয় বিদ্যুৎ আইনে নেই।
আর আইনের সেই কথাই এখন বুঝতে চাইছেন না এক শ্রেণির মানুষ। এখন অনেক জায়গাতেই টাওয়ার বসানোর জন্য জমি চিহ্নিত করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ কর্তাদের অভিযোগ, কোথাও জমির বদলে টাকা, কোথাও বা সরকারি চাকরির দাবি তুলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর জেরে বহু জেলায় বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থা।
বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, সরকার এই সমস্যা কাটাতে না পারলে রাজ্যের সর্বত্র বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। যে যে প্রকল্পগুলো এই ধরনের জমি-জটের কারণে আটকে রয়েছে, তার একটি বিস্তারিত রিপোর্ট রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে সংবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। |
কাজ আটকে রয়েছে |
• মহিষপোতা জিরাট |
• ডোমজুড় হাওড়া |
• কাকদ্বীপ লক্ষ্মীকান্তপুর |
• গোকর্ণ লালগোলা |
• খড়গপুর পশ্চিম মেদিনীপুর |
• রাজারহাট কয়েকটি |
• অ্যাকশন এরিয়া |
|
|
সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত জানান, কিছু লোকের বাধায় বেশ কয়েকটি জরুরি লাইন টানার কাজ করা যাচ্ছে না। অথচ ওই লাইনগুলি টানতে না পারলে বিদ্যুৎ সরবরাহের মান উন্নত করা যাবে না। রাজ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা মতো মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যাবে না।
বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমরেশচন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যের হস্তক্ষেপে টাওয়ার বসানোর সমস্যা মিটেছে। তিনি বলেন, “বাঁকুড়ার খাতড়ায় একটি হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন বসানোর কাজ চলছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের আপত্তিতে সেখানে দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকার মাঠে নেমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করতে পেরেছে।”
তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই যে স্থানীয়দের একাংশের বাধায় বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, তা স্বীকার করে নেন ওই বিদ্যুৎ কর্তা।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২৮টি হাই-ভোল্টেজ লাইন নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার হাতে রয়েছে। যার অর্ধেক কাজই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সরকারি এই সংস্থাটিই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ করে। যার উপর ভিত্তি করেই পরে গ্রাহকদের বাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিয়ে যায় রাজ্য
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের সর্বত্রই বিভিন্ন প্রকল্প যেমন জমি জটে আটকে রয়েছে, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পও। তা ছাড়া, জমির ব্যাপারে বর্তমান রাজ্য সরকারের মনোভাব বুঝে এ ব্যাপারে কোনও রকম জোর খাটানোর পথে এগোতে চাইছেন না বিদ্যুৎ কর্তারা। সংবহন সংস্থার কর্তাদের একাংশ বলছেন, কৃষি
জমি নয়, পতিত জমিতে টাওয়ার বসাতে গেলেও
মানুষ বাধা দিচ্ছে! বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না বলে বেশ কিছু রেল প্রকল্পও আটকে রয়েছে বলে
সংবহন সংস্থার দাবি।
রাজ্যে সরকার বদলের পরে যে সব প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রী সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন তার অন্যতম গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন। সম্প্রতি বিধানসভায় পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটেও ‘সবার জন্য আলো’-র কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্তও জেলায় জেলায় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্প নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন।
কিন্তু টাওয়ার বসানোর কাজে গতি আসছে না স্থানীয়দের একাংশের বাধায়। মণীশবাবু বলেন, “স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। একটু সময় লাগলেও ফল পাওয়া যাবে ঠিকই।” |