এক স্কুলপড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল নিজের বাড়ি থেকে। শুক্রবার সকালে, ব্যারাকপুর তালপুকুরের ভট্টাচার্যপাড়ায়। মৃতার নাম সায়নী ভট্টাচার্য (১৪)। সে ব্যারাকপুর গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা। এই ঘটনায় সায়নীর বাবা তপন সিংহরায় পাশের বাড়ির দশম শ্রেণির ছাত্র ঋতমের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে এ দিন সন্ধ্যায় ঋতম, তার বাবা রাজীব চক্রবর্তী ও মা সুমিতাদেবীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এ দিনের ঘটনার আগে ঋতম বাড়ির ছাদে উঠে ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কাটে।
তদন্তে পুলিশ জানায়, সায়নী ও ঋতমের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে দুই বাড়িতেই আপত্তি ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন ঋতমদের বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো ছিল। তখনই ঋতম ওই কাণ্ড ঘটায়। ঘটনাটি সুমিতাদেবীর নজরে পড়ায় তিনি ছেলেকে বকেন। অভিযোগ, ঋতম মায়ের সঙ্গে তর্ক করায় তার বাবাও তাকে বকেন। পুলিশের অনুমান, এ কথা শুনে সায়নী আত্মহত্যা করে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে স্থানীয়েরা ঋতমদের বাড়িতে চড়াও হন। ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের এসিপি (১) কল্যাণ সরকার। তপনবাবুর অভিযোগ, “ঋতমের জন্য প্রাণ গেল সায়নীর।’’ ঋতমের বাবা রাজীব চক্রবর্তী নিজেও পুলিশকর্মী। রাজীববাবু বলেন, ‘‘বাড়ির পুজো তো নষ্ট হলই, মেয়েটারও অকালে প্রাণ গেল। আমরা ওকে কিছু বলিনি। ঋতমকেই শাসন করেছিলাম।’’ ব্যারাকপুরের গোয়েন্দাপ্রধান দীপনারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘অভিযোগকারীরা আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দিলে মামলা হবে। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক।’’ প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে বিরাটির একটি আবাসন থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির দুই সহপাঠী। তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়েও আপত্তি ছিল দুই পরিবারে। মনোবিদদের অভিমত, প্রণয়ঘটিত বা অন্য কারণে আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা কমবয়সীদের মধ্যে বাড়ছে। মনোবিদ হিরণ্ময় সাহা বলেন, “ছেলেটি যেটা করছিল সেটা প্যারাসুইসাইড। আত্মহত্যার থেকে কম কিছু নয়। ওকে শাস্তি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কমবয়সীদের মধ্যে মানসিক অবসাদে ভোগার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। অভিভাবকেরা যদি ছোটদের সমস্যাগুলি বুঝে সমাধানের পথ দেখান, এমন ঘটনা অনেক কমে যাবে।” |