কালবৈশাখীর জেরে বজ্রপাতে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই ২৪ পরগনায় মৃত্যু হল সাত জনের। ভাঙল বহু গাছ। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ক্ষণ বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন থাকে বিদ্যুৎ সংযোগ। সব মিলিয়ে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বড় মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা আলেয়া বিবি (৩৮) মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে মারা যান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরে উঠে ওই মহিলা বাড়ির পাশে খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। এই দুর্ঘটনার আধ ঘণ্টার মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলের বিল গ্রামের ঝর্ণা সর্দারেরও (৪২) মৃত্যু হয় একই ভাবে। সকালে দোকানে বেরিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান দেগঙ্গার কলসুর গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা ক্ষীরদাসী মুণ্ডা (৪৮)। ঝড়ের সময় একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার ছিঁড়ে নীচে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। |
ঝড়ের তাণ্ডবে বসিরহাটের ঘোনা গ্রামের একটি ইটভাটায় শ্রমিকদের ঘরের একাংশ ভেঙে পড়ে। জখম হন পাঁচ জন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর জখম হন হাড়োয়ার আমতাডিঙির বাসিন্দা সরেজান বিবি এবং নুরি বিবি নামে দুই মহিলা শ্রমিক। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় ঝড়বৃষ্টিতে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা এবং দেগঙ্গার ইয়াজপুর, নন্দীপুর, কলসুর-সহ কয়েকটি গ্রামে গাছ ভেঙে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিছু বাড়ি। কোনও কোনও জায়গায় ঝড়ের দাপটে বাড়ির চাল উড়ে যায়।
একই পরিস্থিতি হয় বনগাঁ মহকুমাতেও। সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বনগাঁ থানার নরহরিপুরের বাসিন্দা তসলিমা মণ্ডল (৪০) এবং তাঁর স্বামী মোসলেম খেত থেকে সব্জি তুলতে যান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে বজ্রপাতে গুরুতর জখম হন ওই দম্পতি। তাঁদের বনগাঁ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তসলিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর স্বামীকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। দুপুরে দম্পতির বাড়িতে যান বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আহতের চিকিৎসার খরচ বহন করা হচ্ছে।” ব্যক্তিগত ভাবেও ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেন তিনি। খেতে কাজ করার সময়ে বজ্রপাতে মারা যান বাগদার চাঁদপুর গ্রামের কৃষ্ণ দাস (২৩)। বজ্রপাতে ক্যানিং মহকুমায় এক ছাত্রী-সহ মারা যান দু’জন। শুক্রবার ভোরে বাসন্তীর সোনাখালির বাসিন্দা সুবল পাত্র (৫৬) প্রতিদিনের মতো প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সেই সময়ে কালবৈশাখী ঝড় ওঠে। বিদ্যুৎও চমকায়। তা দেখে বাড়ি ফিরে আসছিলেন সুবলবাবু। তখনই বজ্রপাতে গুরুতর জখম হন সুবলবাবু। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গোসাবার সাতজেলিয়ার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জয়িতা রপ্তান (১৩) ঝড় শুরু হতে দেখে মাঠ থেকে গরু আনতে যায়। বজ্রপাতে সে-ও জখম হয়। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দু’টি দেহই ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঝড়ের দাপটে বেশ কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “কালবৈশাখীতে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।” |