নিজের পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে শিয়ালদহ স্টেশনে ডাউন কৃষ্ণনগর লোকালের বাঙ্কে পরীক্ষার খাতার বান্ডিল পেয়ে আবদুল মান্নান মণ্ডল বুঝেছিলেন, একটা গোলমাল হয়েছে। এ ভাবে খাতা পড়ে থাকার কথা নয় ট্রেনের কামরায়।
কর্তব্য স্থির করতে বিন্দুমাত্র করেননি বছর তিরিশের ওই যুবক। খাতাগুলি ছিল বসিরহাট কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষের অঙ্ক পরীক্ষার। রাতেই শিয়ালদহ থেকে আবদুল রওনা দেন বসিরহাটের দিকে। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ বারাসত স্টেশনে পৌঁছে জানতে পারেন, বসিরহাটের শেষ ট্রেন চলে গিয়েছে। সারা রাত খাতা আগলে প্ল্যাটফর্মেই বসেছিলেন আবদুল।
ভোর হতেই ট্রেন ধরে বসিরহাট থানায় গিয়ে খাতাগুলি জমা দেন। পেশায় চাষি আবদুলের এই কাজে ‘অভিভূত’ বসিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ রামলাল রায়।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রের খবর, ওই কলেজের অতিথি-শিক্ষক সুজয় নন্দীর বাড়ি বারাসত। বুধবার তিনি দু’বান্ডিল খাতা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কলেজ থেকে। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ অধ্যক্ষকে ফোনে জানান, ট্রেন থেকে তাঁর ব্যাগ চুরি হয়েছে। অধ্যক্ষের পরামর্শে বারাসত জিআরপি-তে অভিযোগ করেন তিনি। তার পর থেকে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ওই শিক্ষক ও অধ্যক্ষ দু’জনেই।
বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাপড়ার পদ্মমালা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল ডাউন কৃষ্ণনগর লোকাল ধরে সার কিনতে যাচ্ছিলেন কলকাতায়। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শিয়ালদহে ট্রেন থেকে নামার সময় তিনি খেয়াল করেন, কামরার এক কোণে বাঙ্কে পড়ে একটি ব্যাগ। মালিকের খোঁজ করেও লাভ হয়নি। কিছুটা দোনামোনা করে ব্যাগ খুলে দেখেন, অনেকগুলি পরীক্ষার উত্তরপত্র সেখানে।
শুক্রবার ভোরে বসিরহাট থানায় বসে আবদুল বলেন, “এক জন পরামর্শ দিয়েছিলেন, বসিরহাট থানায় খাতাগুলি জমা দিতে। রেল পুলিশের হাতে দিলে যথাস্থানে পৌঁছতে দেরি হতে পারে ভেবে বসিরহাটে যাওয়াই ঠিক করি।” তাঁর কথায়, “নিজের পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। তবে বুঝতে পেরেছিলাম, অনেক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে এই খাতাগুলোর সঙ্গে। যে ভাবেই হোক, দায়িত্ব নিয়ে খাতা যথাস্থানে পৌঁছে দিতে হবে।” ভোরে আবদুল বসিরহাট থানায় পৌঁছলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ওই যুবকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন। খবর দেওয়া হয় কলেজের অধ্যক্ষকে। কলেজের অস্থায়ী কর্মী সুরজিৎ মিত্র যখন খাতা আনতে থানায় আসেন, ততক্ষণে অবশ্য বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন আবদুল। অধ্যক্ষ রামলাল রায় বলেন, “প্রায় ৮০-৯০ জন ছাত্রছাত্রীর খাতা ছিল। হারিয়ে গেল কেলেঙ্কারি হত। ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।” |