|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ |
ট্যাক্স বাঁচান, টাকাও খাটান |
সহজ বিনিয়োগের রাস্তা। কখন, কোথায়, কী ভাবে। সন্ধান দিলেন অমিতাভ গুহ সরকার |
সবে এক হপ্তা হল। মানে কিনা নতুন অর্থবর্ষের। এ বারের বাজেটে করমুক্ত আয়ের মাত্রা সামান্য বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে আপনার কর ছাড়ের খুব যে সুবিধে হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আর রোজগার আপনার যা-ই হোক, কর ছাড়ের লক্ষ্যে এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আপনি কোনও মতেই করতে পারবেন না।
তবু, বছরে এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করাও তো কম কথা নয়। করে সর্বোচ্চ ছাড় পেতে গেলে এ ছাড়া কোনও উপায়ও নেই। পথ একটাই। আর্থিক বছরের একেবারে শুরুতেই সারা বছরের বিনিয়োগের রোডম্যাপটা ঠিক করে ফেলা। আপনার মাসিক রোজগার, মাসিক খরচ, এগুলো মাথায় রেখে কত টাকা বাঁচানো যায়, তার একটা হিসেব কষে, তারপর সবচেয়ে লাভজনক কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে তা বিনিয়োগ করা।
কর বাঁচানোর ব্যাপারে ‘আগে গেলে বাঘে খায়’ এই কথাটি চলে না। তবে আর দেরি কেন, রান সংগ্রহ করা যাক প্রথম ওভার থেকেই। |
|
কত জমাবেন ঠিক করে নিন কত টাকা কোন মাসে বিনিয়োগ করবেন, তার একটা হিসেব সবাই করে ফেলার চেষ্টা করেন। জীবনবিমার প্রিমিয়াম-টিমিয়ামগুলো তো আছেই। সেটা কবে দিতে হবে, সে খেয়ালটা রাখতেই হয়। কিন্তু তা ছাড়াও আছে আরও অনেক রাস্তা। কিন্তু বিনিয়োগের আগে মাসের খরচের হিসেবটাও তো করতে হবে। আর এখানেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, সাধারণত সবাই প্রথমে ঠিক করে নেন মাসের খরচটা কত। তার পর মাসের বিনিয়োগের অঙ্কটা ঠিক করেন। এটা করবেন না। মাসিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও আপস করবেন না। রোজগার থেকে বিনিয়োগ বাদ দিয়ে, তার পর খরচের ব্যাপারটা ঠিক করুন। তার জন্যই দরকার সঠিক প্ল্যানিং। সঠিক বাজেটিং।
যদি লোন থাকে, চেষ্টা করুন আপনার লোন শোধের জন্য মাসিক রোজগারের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি যেন ইএমআই না দিতে হয়। কম হলে, আরও ভাল। |
কর বাঁচানোর সহজ পথ |
৮০সি ধারায় কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি এ বারের বাজেটে। এই ধারা অনুযায়ী বিশেষ কয়েকটি প্রকল্পে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে তা বাদ দেওয়া হয় মোট আয় থেকে। প্রকল্পগুলি হল সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ড, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ), জাতীয় সঞ্চয়পত্র (এনএসসি), ইক্যুইটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সঞ্চয় প্রকল্প (ইএলএসএস), জীবনবিমার প্রিমিয়াম, ইউলিপ, গৃহঋণের মূল টাকা পরিশোধ, সন্তানের শিক্ষাখাতে খরচ ইত্যাদি। এক বা একাধিক প্রকল্পে লগ্নি করা যায়। লগ্নি করা এই টাকার ওপর আপনার কর কাটা যাবে না। এ বার আপনি কোন প্রকল্পে কতটা সঞ্চয় করবেন, তা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক ক্ষমতা, ঝুঁকির খিদে, পছন্দের মেয়াদ ইত্যাদির উপর।
এই এক লাখ টাকার পাশাপাশি ৮০ডি ধারাতেও কর বাঁচানোর সুযোগ আছে। স্বাস্থ্যবিমা বাবদ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করা যাবে। এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাবদ খরচ ধরা থাকবে। |
টাকা রাখার পথ
(৮০ সি ধারা অনুযায়ী জনপ্রিয় কর সাশ্রয়কারী প্রকল্প) |
প্রকল্প |
মেয়াদ |
আয় |
সুরক্ষা |
অন্যান্য |
পাবলিক
প্রভিডেন্ট ফান্ড |
১৫ বছর |
৮.৮ % |
সর্বোচ্চ |
সুদ করমুক্ত বাৎসরিক জমা
(পিপিএফ) কমপক্ষে ৫০০
টাকা, সর্বাধিক
১ লক্ষ টাকা |
জাতীয়
সঞ্চয়পত্র(এনএসসি) |
৫ বছর
১০ বছর |
৮.৬ %
৮.৯ % |
সর্বোচ্চ |
সুদ ৮০ সি ধারায়
কর সাশ্রয়ের জন্য বিবেচিত হয় |
৫ বছর মেয়াদি
ব্যাঙ্ক আমানত
(৮০ সি ধারা অনুযায়ী) |
৫ বছর |
৯-৯.৫ % |
উচ্চ সুরক্ষা |
সুদ করযোগ্য |
জীবন বিমা |
১০ বছর |
বিভিন্ন |
উচ্চ সুরক্ষা |
ঝুঁকির বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা |
ইক্যুইটির সঙ্গে
সম্পর্কযুক্ত সঞ্চয় প্রকল্প |
৩ বছর |
ইক্যুইটির
বাজারের
সঙ্গে |
বাজারজনিত
ঝুঁকি আছে |
ভাল বাজারে
বড় লাভের সম্ভাবনা |
(ইএলএসএস) সম্পর্কযুক্ত
ইউলিপ
|
৫/১০ বছর |
বাজারের সঙ্গে
সম্পর্কযুক্ত |
বাজারজনিত
ঝুঁকি আছে |
প্রাথমিক খরচ বেশ বেশি।
ভাল বাজারে
ভাল লাভের
সম্ভাবনা |
ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেশি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প প্রবীণ নাগরিকদের জন্য উপযুক্ত নয়। এই কারণে ইএলএসএস,
পিপিএফ এবং জীবনবিমার থেকে এঁদের জন্য বেশি উপযুক্ত হতে পারে ৫ বছর মেয়াদি জাতীয় সঞ্চয়পত্র এবং
কর সাশ্রয়কারী ব্যাঙ্ক আমানত। আর একটু ছোট মেয়াদ চাইলে এবং ঝুঁকিবিমুখ
না হলে ইএলএসএস-এর কথাও ভাবতে পারেন। |
|
এ বার প্ল্যানিং করুন |
সুনীল বসাক আর সুমিত রায়। প্রথম জনের ছোটখাট একটি কনসালটেন্সি ফার্ম আছে। অর্থাৎ স্বনিযুক্ত। দ্বিতীয় জন সবে চাকরি জয়েন করেছেন। দু’জনেরই মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু যাই হোক না কেন, কর সাশ্রয় তো সেই এক লক্ষ টাকার বেশি হবে না। তা হলে সুনীল আর সুমিত এ বছরে কী ভাবে এগোবেন?
সুমিতের চাকরি, সুতরাং প্রভিডেন্ড ফান্ডের ব্যবস্থা আছে। সুনীল যেহেতু নিজস্ব ব্যবসা করেন, তাঁর সে সুযোগ নেই। সুতরাং তাঁকে অন্য কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে। সেটা পিপিএফ হতে পারে, বা ব্যাঙ্ক আমানত। এগুলো যথেষ্ট সুরক্ষিত বিনিয়োগ। কিন্তু সুনীল একটু ঝুঁকিও নিতে ভালবাসেন। সুতরাং তাঁর জন্য উঁচু আয়ের সম্ভাবনাযুক্ত ইএলএসএস প্রকল্পও বিনিয়োগের একটা পথ হতে পারে। তারপর মাথায় রাখতে হবে জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থাও। নিজের প্রয়োজন এবং সাধ্য অনুযায়ী এই ধরনের একটি সুষম পরিকল্পনা রচনা করে বছরের প্রথম মাস থেকে শুরু করলে স্লগ ওভারে চাপের মধ্যে পড়তে হবে না। |
কোন মাসে কত বিনিয়োগ |
এ বার কোন মাসে কতটা বিনিয়োগ করবেন এঁরা? প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে প্রতি মাসে সামান্য ৪,৫০০ টাকা যদি বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে রাখা যায়, তা হলেই সেভিংস প্ল্যান অনেক সহজ হয়ে যায়। হিসেব করুন, ৫৪,০০০ টাকা এখানেই হয়ে যায়। তার পর ধরুন জীবন বিমার প্রিমিয়াম আছে। সেই অঙ্কটা যদি ১০,০০০ টাকা হয়, তা হলে বিনিয়োগের অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪,০০০ টাকা। তা হলে এক লাখের মধ্যে বাকি রইল ৩৬,০০০ টাকা।
সুমিতের চাকরি। ৪০ হাজার টাকা মাস মাইনে হলে, ৩৬,০০০ টাকা এমনিতেই প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা হবে। সুতরাং সুমিতকে বছরে ৬৪,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে না। সুনীলকে কিন্তু করতে হবে। টাকার অঙ্কটা কম নয়। সুনীলের যতই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে ঝোঁক থাক, বেশি লাভের জন্য ইএলএসএস স্কিমে খুব বড় অঙ্ক না লাগানোই ভাল। তার চেয়ে আরেকটা জীবনবিমা করতে পারেন তিনি। ধরা যাক তার প্রিমিয়াম ১০,০০০ টাকা। বাকি যে ২৬,০০০ টাকা রইল, আমার মতে সেটা পাঁচ বছরের ব্যাঙ্ক আমানতে রাখা উচিত। এতে ইন্টারেস্ট রেট ভালই। টাকাও সুরক্ষিত। আর হ্যাঁ, ধরে নিচ্ছি সুমিতের প্রতিষ্ঠান তার জন্য একটি হেল্থ ইনসিওরেন্স করবেই। তা সত্ত্বেও বলব আরেকটু কষ্ট করে ১৫,০০০ টাকার একটা নিজস্ব হেল্থ প্ল্যান যদি করে ফেলতে পারেন, বিপদের সময় কাজে আসবে। হেল্থ প্ল্যানে অবশ্য শুধু ট্যাক্স ছাড়ই পাওয়া যায়। বিনিয়োগের ওপর আয়ের কোনও সুযোগ নেই। সুনীলের ব্যবসা। তাঁকে তো সেটা করতেই হবে।
মাসে কত টাকা কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন এঁরা, তার একটা প্ল্যানিং সঙ্গের ইয়ার প্ল্যানারে দেওয়া হল। একেবারে এই মতোই যে এগোতে হবে, তার কোনও মানে নেই। এটা ইঙ্গিতমাত্র। টেবলে অবশ্য তিন মাস অন্তর পিপিএফ-য়ে বিনিয়োগের কথা বলেছি। তবে প্রতি মাসে পিপিএফ-য়ে বিনিয়োগ করলে লাভের মাত্রা বেশি হবে। কারণ পিপিএফ-য়ে প্রতি মাসে বিনিয়োগ করলে এককালীন বিনিয়োগের থেকে করমুক্ত সুদবাবদ আয় বেশি হবে। |
বিনিয়োগের ইয়ার প্ল্যানার*** |
|
সুমিত রায়
(চাকরিজীবী) |
সুনীল বসাক
(স্বনিযুক্ত) |
বার্ষিক আয় |
৪,৮০,০০০ |
৪,৮০,০০০ |
বেসিক মাইনে |
৩,০০,০০০ |
- |
কর ছাড়ের অঙ্ক (৮০সি ধারায়) |
১,০০,০০০ |
১,০০,০০০ |
হেল্থ ইনসিওরেন্স/ চেক-আপ
(করছাড় ৮০ডি ধারায়) |
১৫,০০০ |
১৫,০০০ |
সেভিংস প্ল্যান
প্রভিডেন্ট ফান্ড (১২ মাসে) |
৩৬,০০০ |
- |
মাসিক বিনিয়োগ প্ল্যান |
|
প্রকল্প |
|
|
এপ্রিল |
ইএলএসএস(এসআপি) |
২,০০০ |
২,০০০ |
মে |
পিপিএফ*
ইএলএসএস (এসআইপি) |
৭,৫০০
২,০০০ |
৭,৫০০
২,০০০ |
জুন |
ইএলএসএস
হেল্থ ইনসিওরেন্স ##
/চেক-আপ (৮০ডি ধারায়) |
২,০০০
১৫,০০০ |
২,০০০
১৫,০০০ |
জুলাই |
ইএলএসএস |
২,০০০ |
২,০০০ |
অগস্ট |
পিপিএফ
ইএলএসএস |
৭,৫০০
২,০০০ |
৭,৫০০
২,০০০ |
সেপ্টেম্বর |
ইএলএসএস |
২,০০০ |
২,০০০ |
অক্টোবর |
ইএলএসএস
জীবনবিমার প্রিমিয়াম**
|
২,০০০
১০,০০০ |
২,০০০
১০,০০০ |
নভেম্বর |
পিপিএফ*
ইএলএসএস |
৭,৫০০
২,০০০ |
৭,৫০০
২,০০০ |
ডিসেম্বর |
ইএলএসএস |
২,০০০ |
২,০০০ |
জানুয়ারি |
ইএলএসএস |
২,০০০ |
২,০০০ |
ফেব্রুয়ারি |
পিপিএফ*
ইএলএসএস |
৭,৫০০ |
৭,৫০০ |
মার্চ |
ইএলএসএস
জীবনবিমার প্রিমিয়াম**
পাঁচ বছরের ব্যাঙ্ক আমানত |
২,০০০
-
- |
২,০০০
১০,০০০
২৬,০০০ |
মোট |
|
১,১৫,০০০ |
১,১৫,০০০ |
* প্রত্যেক মাসেও পিপিএফ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন।
## এই মাসেই যে করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। নির্ভর করছে প্ল্যানের ওপর।
** ইঙ্গিতমাত্র। কোন মাসে প্রিনিয়াম জমা দেবার তারিখ পড়ছে, তার ওপর নির্ভরশীল।
পিপিএফ (পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড), ইএলএসএস (মিউচুয়াল ফান্ডে ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম বা ইক্যুইটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সঞ্চয় প্রকল্প), এসআইপি (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান সুষম বিনিয়োগ প্রকল্প)।
*** ইঙ্গিতমাত্র। |
|
আরও রাস্তা |
রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস প্রকল্প নামে একটি নতুন কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে এ বারের বাজেটে। আয় যাঁদের ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে এমন ইক্যুইটিতে নতুন খুচরো লগ্নিকারীরা ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নির ৫০ শতাংশের উপর কর ছাড়ের সুযোগ পাবেন। কেনা শেয়ার তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করা যাবে না। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিশদ নিয়মকানুন পরে জানানো হবে। ইক্যুইটিতে নতুন খুচরো লগ্নিকারী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এই কারণে কাল্পনিক উদাহরণে এই প্রকল্পটিকে ধরা হয়নি। |
|
|
|
|
|