রবীন্দ্রনাথের বসন্ত ঋতু ও প্রেম পর্যায়ের গান প্রবীণ আর নবীন দুই শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল ‘এ বসন্তে’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানে উত্তম মঞ্চে। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ কবিতা দিয়ে শুরু। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ ও জয় গোস্বামীর কবিতায় সংকলিত ছিল গ্রন্থনা অংশটি। সতীনাথের কথার সূত্র ধরেই সুছন্দা ঘোষ শুরু করলেন ‘আমার মল্লিকা বনে’ গানটি। বসন্ত আর প্রেম যে এক সূত্রে বাঁধা তাই যেন ফুটে উঠল গানের মাধ্যমে। তার পরেই মৃন্ময় রায় গান ধরলেন ‘মোর বীণা ওঠে’। এই ভাবে একের পর এক দু’জনেরই দশটি করে গান। শেষে শোনা গেল ‘আজ খেলা ভাঙার খেলা’। ইদানীং কালে সুছন্দার গানে একটা ক্রমোন্নতির রেখা ধরা পড়ছে। তবে গানের কথা ও ভাব অনুযায়ী একটু মডিউলেশনের প্রয়োজন আছে। এটুকু বাদ দিলে তাঁর মুক্ত কণ্ঠ, জড়তাহীন উচ্চারণ এবং তিনি কখনও সুরভ্রষ্ট হন না। এ দিন প্রত্যেকটি গানেই স্বচ্ছন্দ থাকলেও বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’, ‘বারতা পেয়েছি মনে মনে’ গানগুলি।
বর্ষীয়ান মৃন্ময় রায় কর্মব্যস্ত সময়ের অবসরে রবীন্দ্রনাথের গানে ডুবে থাকেন। শৌখিন গায়ক হলেও সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকেই মনের আনন্দে গান করেন। গানের কথাকে ঝোঁক দিয়ে বলার প্রবণতা থাকলেও এ দিন কোনও গানেই ছন্দভ্রষ্ট হননি। তাঁর গাওয়া ‘মোর বীণা’, ‘আমি পথভোলা এক’, ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’, ‘মধুর বসন্ত এসেছে’ সুগীত। সঙ্গীত আয়োজনে ছিলেন কুন্দন সাহা। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় সতীনাথের গদ্যাংশ পাঠ, কবিতা, সবই সর্বাঙ্গসুন্দর। অনিন্দিতা বসুও ভাল পড়েছেন। আয়োজক সংস্থা ইউ.ডি. সিরিজ। |
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ‘অন্বেষা’র অনুষ্ঠানে প্রথমেই শান্তিপ্রিয় সেনগুপ্ত শোনালেন বাংলা আধুনিক গান। এর পরে মালবিকা সুরের কণ্ঠে ‘মনে করো আমি নেই’ বেশ ভাল। পরের শিল্পী নিবেদিতা ঘোষ গাইলেন ‘বধূ কোন আলো’। বনশ্রী সেনগুপ্তের ‘আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম’ শ্রোতাদের কাছে বাড়তি পাওনা। জয়তী ভট্টাচার্যের ‘বাসন্তী হে ভুবন মোহিনী’ এবং শিখা দত্তের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ গান দু’টি যোগ্য নির্বাচন। এ ছাড়াও গাইলেন রেবা হালদার, মালবিকা ভট্টাচার্য, গিণিমালা দে, কাকলি দেব, বাবলি চক্রবর্তী। ঊষসী সেনগুপ্তের আবৃত্তির পর মন কেড়ে নিল সুপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়ের ‘কত দিন বৃষ্টি খাই না’। সঞ্চালনায় ছিলেন মৌ ভট্টাচার্য ও তমালী ঘোষ।
|
সম্প্রতি পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল ‘হ্যালো রবীন্দ্রনাথ’। সুদেষ্ণা রুদ্রের কণ্ঠে ‘ঝড়ে যায় উড়ে যায়’, ‘এমনি করে যায় যদি দিন’ ত্রুটিহীন। একই সঙ্গে চণ্ডালিকার মা ও মেয়ের চরিত্র রূপায়ণে সুদেষ্ণার সাফল্য অনস্বীকার্য। বিশ্বরূপ রুদ্রের ‘গোধূলি গগনে’ এবং ‘কাল রাতের বেলা’ শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। তবে এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’। সঞ্চালনায় ছিলেন রঞ্জন ঘোষাল। প্রতিটি গান পরিবেশিত হয় চেম্বার অর্কেস্ট্রার সঙ্গে, যার পরিচালনায় ছিলেন ভায়োলিন ব্রাদার্স। দেবশঙ্কর ও জ্যোতিশঙ্কর-এর অর্কেস্ট্রায় ছিল গ্রুপ ভায়োলিন, গ্রুপ পিয়ানো, চেলো, গিটার প্রভৃতি।
পাশ্চাত্য ধারার যন্ত্রাণুসঙ্গে যে গানগুলি এ দিন গাওয়া হয় তার প্রত্যেকটিই ভারতীয় রাগসঙ্গীতের প্রভাবে নিবদ্ধ। অনুষ্ঠানে নাট্যরূপায়ণে ছিলেন রাজর্ষি মুখোপাধ্যায় এবং দোয়েলপাখি দাশগুপ্ত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপরিণত বা দুর্বল নাট্যাভিনয় অনুষ্ঠানের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। |