মুখোমুখি ২...
বাঙালি বেশির ভাগই লেঙ্গি
খাওয়া তাই আমার গান ভাল লাগে

পত্রিকা: আচ্ছা, যাদবপুরে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গোল্ড মেডেল আর প্রথম গান এ রকম রেকর্ড হিট। কোনটা আপনাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে?
অনুপম: দূর! গোল্ড মেডেল পাওয়াটা কোনও ইস্যুই না। ওটা ক্লাসের যে-কেউই পেতে পারত। ভাগ্যক্রমে আমি পেয়েছি। তার থেকে বরং জয়েন্ট ক্র্যাক করাটা অনেক এক্সাইটিং ছিল। আর গান হিট করাটাও সে রকম কিছু বিরাট ব্যাপার না। গান হিট করবে কি না ভেবে তো আর গান লিখিনি। তবে মানুষ যে আমার গান শুনেছেন সেটাই অনেক বড় কথা।

পত্রিকা: বুঝলাম। বেঙ্গালুরুর চাকরিটা কি একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন?
অনুপম: আচ্ছা তখন থেকে এত আপনি আপনি করছ কেন বল তো?

পত্রিকা: তা হলে কী বলব?
অনুপম: ‘তুমি’ বলবে। ‘বেডরুম’এ আমি গান গাইলাম, তুমি অভিনয় করলে। একই সময়ে কাজ করছি তো আমরা...(হাসি)।

পত্রিকা: হ্যাঁ সেই ভাল। তা যেটা বলছিলাম, বেঙ্গালুরুর চাকরিটা কি একেবারে ছেড়ে দিয়েছ?
অনুপম: একদম। আসলে ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ হিট করার পর ওখানে অনেক ফোন আসত। লোকে জানতে চাইত, “দাদা, আপনি কি শো করেন?” তখন ইচ্ছা থাকলেও ‘না’ বলতে হত। তার পর কিছু দিন এ-দিক ও-দিকমানে একবার কলকাতা একবার বেঙ্গালুরু করে তিন মাস কাটালাম। তখন ছেড়েই দিলাম।

পত্রিকা: কিন্তু এ রকম তো হতে পারে যে, একটা সময়ের পরে গিয়ে এই সব শো বা মিউজিক ডিরেকশনও বোরিং লাগতে পারে...
অনুপম: লাগতেই পারে। তখন আবার ভাবব যে, সেই মুহূর্তে আমি কী করতে চাই।

পত্রিকা: তার মানে তুমি মুহূর্তে বিশ্বাস করো? লং টার্ম প্ল্যানিংয়ে নয়!
অনুপম: একদমই তাই। লং টার্ম প্ল্যানিং করে কিছু হয় না। আমি জানি আমি কী ভাবে বাঁচতে চাই, কী কী করলে আনন্দে থাকব এবং তা-ই করব।
ছবি: কৌশিক সরকার
পত্রিকা: তার মানে ‘আনন্দে থাকা’ ব্যাপারটাই তোমার জীবনের মূল চালিকাশক্তি।
অনুপম: হ্যাঁ, তা বলতে পারো। তবে আমি মিষ্টি খেলেও খুব আনন্দ পাইতার মানে কি আমি সারা জীবন মিষ্টি খেয়েই কাটাব? তা নয়। মানে ব্যাপারটা হল, আমি সারা জীবন নানা ভাবে সৃজনশীল থাকার চেষ্টা করব। গান লিখব, কবিতা লিখব বা স্ক্রিপ্ট লিখব, পরিচালনা করব।

পত্রিকা: এক মিনিট এক মিনিট, তার মানে তোমার পরিচালনাতে আসারও ইচ্ছে আছে?
অনুপম: হ্যাঁ অবশ্যই। আমি তো এর আগে একটা শর্ট ফিল্ম পরিচালনাও করেছি।

পত্রিকা: বাঃ এ তো দারুণ খবর! যা করেছ তাতেই সোনা। যখন পড়াশোনা করেছ, একবারে জয়েন্ট। তার পর গোল্ড মেডেল। যখন গান লিখেছ, এক চান্সেই সুপার হিট।
অনুপম: মোটেই না, অনেক ফেলিওর-ও আছে।

পত্রিকা: আছে বুঝি? যেমন?
অনুপম: এই যেমন... (অনেকক্ষণ ভাবা ও নীরবতা)

পত্রিকা: এত যখন ভাবতে হচ্ছে, তার মানে ফেলিওর নেই।
অনুপম: না না অনেক আছে। কোনটা বলব... মানে কোনটা বলা উচিত সেটা বুঝতে পারছি না। এই যেমন ধরো, আমি একটা সময়ে ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছি তাতে ফেল। তার পর কলেজের ক্রিকেট ম্যাচে একটা ম্যাচও জিততে পারতাম না। এই রকম নানা ছোটবড় ফেলিওর আছে আমার।

পত্রিকা: একটা কথা বলো তো এ বারএই যে তুমি লিখেছ, সব পেলে নষ্ট জীবন। কী কী পাওনি বলে তোমার জীবনটা নষ্ট হ য়নি বলে মনে হয় তোমার?
অনুপম: (হাসি) আসলে, মানে আর কিছুই নাওই আঙুর ফল টক আর কী। আর বাঙালির খুব ভাল লাগে এ সব ব্যাপার-স্যাপারগুলো। আসলে বাঙালি তো বেশির ভাগই লেঙ্গি খাওয়া, তাই বেশির ভাগ মানুষই এটার সঙ্গে ‘রিলেট’ করতে পারে। তাই মনে হয় লাইনটার এত জনপ্রিয়তা (হাসি)। সত্যিই কি সব পেলে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে? একেবারেই নয়। বরং সব পেলে আমার ভালই লাগবে। যখন সেটা হয় না, তখন ওই সব লিখতে হয়!

পত্রিকা: এ বারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে তোমার নতুন অ্যালবাম বেরোল ‘দূরবিনে চোখ রাখব না’। এটা নিয়ে কিছু বলবে?
অনুপম: হ্যা। অবশ্যই বলব। ২০০৫ সাল থেকে আমি বিভিন্ন ক্যাসেট কোম্পানির দোরে দোরে ঘুরেছি, আমার গাওয়া আটটা গানের সিডি নিয়ে। কেউ রাজি হয়নি। কলকাতার অধিকাংশ ক্যাসেট কোম্পানি বোধহয় আমায় চেনে, কিন্তু কেউ রাজি ছিল না। সবাই বলত, টাকা দিন আমরা বের করছি। এই ভাবে আমি সিডি বের করতে চাইনি। যাই হোক, শেষ অবধি ভেঙ্কটেশ ফিল্মস বের করল। ভি মিউজিকের ‘দূরবিনে চোখ রাখব না’।

পত্রিকা: হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই?
অনুপম: না। বাংলার বাইরে যদি যেতে হয়, আই উইল গো ইন্টারন্যাশনাল। ইংরেজিতেও গান লিখি যখন বৃহত্তর শ্রোতাদের জন্যই গান লিখব। হিন্দি কেন?

পত্রিকা: না, আমি বলছি হিন্দিতে অন্য কারও সুরে প্লেব্যাক করা?
অনুপম: তা হলে আমি কেন? আমার গান তো আমার লেখার উপরই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো অন্যের গানে প্লে-ব্যাক করতে অতটা ইনটারেস্টেড নই। এখন বাংলায় প্রোফেশনালি প্লে-ব্যাক করি, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আসলে নিজের গান, নিজের কথা শোনাতে অনেক বেশি ইন্টারেস্টেড। ওটাই প্যাশন। মানে এ রকম যদি হয় যে, আমার গান কেউ শুনল না, কেবল প্লে-ব্যাক করে কাটাতে হলতা হলে আলাদা। কিন্তু আপাতত সেটা ভাবতে পারছি না। মানে ফুল টাইম প্লে-ব্যাক করার থেকে তো আমার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরিই ভাল ছিল।

পত্রিকা: বুঝলাম। আচ্ছা এই যে তোমায় নতুন ইয়ুথ আইকন ভাবা হচ্ছে...
অনুপম: ইয়ুথ আইকন? জানতাম না তো!

পত্রিকা: সে কী! জানতে না? এই সাক্ষাৎকারের অন্যতম কারণটাই তো তাই।
অনুপম: তা হলে আমার এখনও ইউথ আছে, বলো? (হাসি)

পত্রিকা: এ কী! ইয়ুথ নেই মানে? তুমি কত লোকের মানে কত মহিলার হার্ট থ্রব জানো?
অনুপম: হ্যাঁ, তা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি।

পত্রিকা: তুমি তো এখানে একা থাকো...
অনুপম: হ্যা। আমি সেপারেটেড।

পত্রিকা: জানতাম না। তা শেষ কবে প্রেমে পড়েছ?
অনুপম: বলতে পারো আমি প্রেমেই থাকি।

পত্রিকা: (হাসি) প্রেমে থাকাটা আবার কী?
অনুপম: মানে গভীর ভাললাগা, যেটা দীর্ঘস্থায়ী। সেইগুলো নিয়েই বেঁচে থাকা। প্রেমে দুমদাম পড়ি না হয়তো কিন্তু প্রেমে থাকি।

পত্রিকা: কিন্তু একই সঙ্গে মানে একই সময়ে একাধিক জনকে গভীর ভাবে ভাল লাগতে পারে?
অনুপম: না, ওটা আমি কোনও ভাবে নিজেকে অ্যালাউ করবই না। মানে এ রকম হতেই পারে না। তার মানে আমার ওই ভালবাসার কোনও দাম নেই। (ভেবে) আসলে আমি মিডিওক্রিটি-তে বিশ্বাস করি না। মানে আমার একটা সম্পর্ক আছে যেটা খুব ভাল নয়, আর একটা সম্পর্ক আছে যেটা ওটার চেয়ে ভাল তা হলে আমার ওই সম্পর্কটার দরকার নেই, এটার আছে। সুতরাং আমার সব সময় একটাই থাকে।

পত্রিকা: তার মানে বলা যেতে পারে তুমি ওয়ান-ওম্যান ম্যান?
অনুপম: হ্যাঁ, তা বলতে পারো।

পত্রিকা: ইয়ুথ আইকন হিসেবে তুমি নিজেকে দশে কত নম্বর দেবে?
অনুপম: আমি? দশে শূন্য।

পত্রিকা: কেন, কেন?
অনুপম: না না, আমি আইকন হতেই পারি না! আমি কোনও আইকনই হতে পারি না। লোকে আমায় কেন ফলো করবে? আসলে কারওই কাউকে ফলো করা উচিত না। মানে হতে পারে, আমরা এক-একটা বিষয়ে এক-এক জনকে ফলো করব। হ্যাঁ, সেটা হতে পারে। আর আমার তো অসংখ্য নেগেটিভ কোয়ালিটি-ও আছে। সেগুলো ফলো করলেই তো মুশকিল। কেউ যদি আমায় সত্যিই ফলো করতে চায় তা হলে আমায় বলতে হবে যে, সে কোনটা ফলো করতে চায়। তার পর আমি অ্যাপ্রুভাল দিলে তবে ফলো করতে পারবে। বড়জোর এটা হতে পারে (হাসি)।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.