প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের বরাদ্দ খরচেও ব্যর্থ প্রশাসন
প্রাথমিকে পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’ থেকে অর্থও বরাদ্দ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও সেই বরাদ্দ পেয়েছিল। কিন্তু খরচ করতে পারেনি! ফলে বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রশিক্ষণ থেকে শিক্ষকেরা নিত্যনতুন ধারণা পেয়ে থাকেন। যা ক্লাসে পড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকা সময়ে খরচ করতে না পারায় শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। যদিও চলতি আর্থিক বছরে (২০১২-১৩) প্রশিক্ষণের জন্য ফের অর্থ বরাদ্দ হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
কিন্তু গত আর্থিক-বছরে (২০১১-১২) বরাদ্দ খরচে ব্যর্থতার কারণ কী? প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, মূলত স্কুল-শিক্ষা দফতরের পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থা। জেলা প্রাথমিক স্কুল-শিক্ষা দফতর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি বলেই পরিকল্পনাও করতে পারেনি বলে অভিযোগ। ভবিষ্যতে যাতে একই অবস্থা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুল-শিক্ষা দফতরকে এ বার আর্থিক বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে জমা দেওয়ার পরেই অর্থ দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) উত্তম পাত্র বলেন, “এ বার থেকে বছরের শুরুতেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। চলতি বছরে যাতে প্রশিক্ষণের বিষয়টি সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য এখন থেকেই পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে। পুরনো বছরের যে টাকা খরচ হয়নি, সে টাকা অবশ্য ফেরত দিতে বলা হয়েছে।”
বিভিন্ন বিষয়েই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগে এই প্রশিক্ষণ ছিল বছরে ১০ দিন। এখন তা বাড়িয়ে বছরে ২০ দিন করা হয়েছে। গুরুত্ব অনুযায়ীই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে ৮ কোটি টাকা প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ করেছিল। যে টাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাধ্যমিক-স্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে সমস্যা হয়নি বলেই প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রাথমিকে অঙ্ক, প্রকৃতি-বিজ্ঞান, শিক্ষার অধিকার, জাতীয় পাঠ্যক্রম, গ্রন্থাগার ব্যবহার ও গ্রন্থাগারের ভূমিকা-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রতিটি ব্লকে ১৫ জন করে রিসোর্স-পার্সনও তৈরির কথা। অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লকে ৪৩৫ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘ডিস্ট্রিক্ট রিসোর্স-পার্সন’ (ডিআরএস) তৈরি করার কথা ছিল। পরে ওই ডিআরএস-রাই নিজেদের চক্রের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, এমনটাই নিয়ম। ওই প্রশিক্ষণের জন্য প্রথম ধাপে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ও পরের ধাপে ৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকাও শিক্ষা দফতরকে দিয়েছিল প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই টাকায় ডিআরএসদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিছু চক্রে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু তা এতটাই দেরিতে হয়েছে যে, মার্চ মাস অর্থাৎ আর্থিক বছর শেষ হয়ে গেলেও প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। কিন্তু সরকারি নির্দেশ রয়েছে, মার্চ মাসের মধ্যেই প্রশিক্ষণ শেষ করতে হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে-সব জায়গায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে সেখানে এপ্রিল মাসের মধ্যেই শেষ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আর যে-সব চক্রে প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি বা এপ্রিল মাসের মধ্যেও শেষ হবে না, তাদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১১ লক্ষ টাকা ফেরতও এসেছে। আরও কয়েকটি চক্র থেকে টাকা ফেরত আসার কথা। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ হয়নি বলেই প্রাথমিক হিসাব। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) শিশির মিশ্র-র বক্তব্য, “আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিছু চক্রে প্রশিক্ষণের কাজ হয়েছে। বাকি চক্রগুলির টাকাই ফেরত যাচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.