দান করা জমি পড়ে, স্কুল হয়নি ৩৭ বছরে
৭ বছর ধরে জমিটা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অব্যবহৃত অবস্থায়। এগরার প্রত্যন্ত এলাকা মহেশপুরে শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ওই ৯ ডেসিমেল জমি দান করেছিলেন এক নিরক্ষর বৃদ্ধা। কিন্তু সেই দানের কোনও মর্যাদা রাখেনি প্রশাসন-পুরসভা। অবহেলায়-অনুৎসাহে আজও ফাঁকা পড়ে রয়েছে দান করা সেই জমি।
এগরা পুর-এলাকার মধ্যেই পড়ে মহেশপুর। যদিও বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত পুরসভা থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন ছিল তফসিলি জাতি-উপজাতি, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই অঞ্চল। ছিল না রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা। এখন সেই সব পরিষেবা পৌঁছলেও শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী বা শ্রমজীবী। পিছিয়ে পড়া এই এলাকায় কোনও স্কুল নেই। তাই দেড়-দুই কিলোমিটার দূরের পুরুষোত্তমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একলাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই যেতে হয় মহেশপুরের কচিকাঁচাদের। সদা ব্যস্ত এগরা-খড়্গপুর ও এগরা-বাজকুল রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় বলে অনেক অভিভাবক আবার ওই দুই স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে ভরসাও পান না।
অশিক্ষাই পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ বুঝতে পেরে স্কুলের জন্য জমি দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিরক্ষর কৃষিজীবী সুরেন্দ্রনাথ কোটাল।
নিজস্ব চিত্র।
তাঁর অকালমৃত্যুর পরে স্ত্রী অহল্যাদেবী ১৯৭৫ সালের ২৮ অক্টোবর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে (প্রাথমিক) ৯ ডেসিমেল জমি দান করেন। কিন্তু দান করা জমিতে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়নি কেউ। ইতিমধ্যে অহল্যাদেবী প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে। অহল্যাদেবীর নাতি প্রৌঢ় জগন্নাথবাবু চাষবাস করেই সংসার চালান। কোটাল পরিবারের এক সদস্য ফাল্গুনী কোটাল বলেন, “অনেক গ্রামে জমির সমস্যায় স্কুল তৈরি হয় না। আর এখানে ৩৭ বছর ধরে জমি পড়ে রয়েছে। স্কুল তৈরিতে উৎসাহ নেই কারও।”
স্থানীয় বাসিন্দা মাধবচন্দ্র কর বলেন, “স্কুলের জন্য সেই আশির দশকের শেষ থেকে আমরা পঞ্চায়েত, এমনকী রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত দরবার করেছি। আশ্বাস পেলেও কাজ হয়নি। এখনও এলাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া মাধ্যমিক উত্তীর্ণও পাওয়া যাবে না।”
কিন্তু যেখানে জমির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল গড়ে উঠতে পারছে না, সেখানে জমি পেয়েও এত দিনে স্কুল হল না কেন?
পুরসভা থেকে প্রশাসনসকলেই একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত। নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েত থেকেই স্কুল তৈরির প্রস্তাব পাঠানোর কথা। এগরা পুরসভা গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের তরফে এক বার স্কুল তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল ঊর্ধ্বতন মহলে। কিন্তু নানা কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। ১৯৯৩ সালে এগরা পুরসভা গঠনের পরে ৬ বছর ছিল বামেদের দখলে। আর তার পরের ১০ বছর ছিল তৃণমূলের দখলে। স্কুল নিয়ে ভাবেনি কেউ।
এগরার বর্তমান পুরপ্রধান কংগ্রেসের স্বপন নায়েক বলেন, “পুরসভায় আগে যাঁরা ক্ষমতাসীন ছিলেন, তাঁদের ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক লোকজনদের ভূমিকার কথা ভাবলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। আট মাস আগে আমরা জেলায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে, তার অনুমোদন এখনও আসেনি।” তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “অনুমোদনের জন্য ওই প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। এই আর্থিক বছরেই অনুমোদন পাওয়ার আশা করছি।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) রেনুকা মাজি বলেন, “এতদিন ধরে স্কুলটি হল না কেন খতিয়ে দেখছি। এ বার ১২টি নতুন স্কুলের প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় ওই স্কুল রয়েছে কি না দেখে বলতে হবে।” এতদিনের অবহেলার দায় বাম সরকারের উপরে চাপিয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি গোপাল সাউ ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়ে মহেশপুরে স্কুল তৈরির বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। দায় চাপানো ও আশা-প্রতিশ্রুতির পালা চলছে আগের মতো। ‘পরিবতর্নে’র রাজ্যে কাজ কতটা হয়, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.