নন্দকুমারের অনিয়মে তদন্তের সিদ্ধান্ত
অধিগৃহীত জমির হাতবদল, শিকেয় সাবস্টেশন
বিদ্যুতের সাবস্টেশন গড়তে জমি অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া হয়েছিল সেই ২০০৯-এ। ১৪ মাস আগে কাগজে-কলমে অধিগ্রহণও হয়ে গিয়েছিল সেই জমি। মাটি পরীক্ষা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা টের পেলেন, জমির একাংশের হাতবদল হয়ে গিয়েছে! মাটি পরীক্ষা হবে কী ভাবে, জমিটাই হাতে আসেনি! অগত্যা পিছিয়ে আসতে হয় বিদ্যুৎ দফতরকে।
পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দকুমারের খঞ্চিতে এ ভাবেই জমি-জটে আটকে গিয়েছে সাবস্টেশন তৈরির কাজ। পটাশপুরের সাউৎখণ্ডে জমি দিতে কৃষিজীবীরা ‘অনিচ্ছুক’ হওয়ায় সেখানেও সাবস্টেশন তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। পটাশপুরে জমি ‘দখল’ করেই কাজ এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূলের জেলা পরিষদ। যা আবার জমি নিয়ে তৃণমূলের ঘোষিত নীতির উল্টো। ফলে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। আর খঞ্চিতে জট কাটাতে আলোচনার পাশাপাশি জমির নিয়মবিরুদ্ধ হাতবদল নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কত দিনে জট কাটবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েছেই।
যে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছিল, তা কী করে একাধিক জন (দাস-পরিবারের সাত শরিক) অন্য জনকে বিক্রি করতে পারলেন? কী ভাবেই বা সেই বেচা-কেনা ভূমি দফতরে রেজিস্ট্রি হল? এমনকী মিউটেশন পর্যন্ত হয়ে গেল? খঞ্চিতে জমি-জটের সঙ্গেই উঠে এসেছে ভূমি দফতরে অনিয়মের প্রসঙ্গও। নন্দীগ্রামে রেল-প্রকল্পের অধিগৃহীত জমির একাংশেরও এ ভাবেই হাতবদল হয়েছিল। পরের পর ঘটনায় জেলায় ভূমি দফতরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন জমি-জটের কথা স্বীকার করেই বলেন, “খঞ্চিতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই কয়েক জন জমি-মালিক অন্য ব্যক্তিকে জমি বিক্রি করেছেন। এটা নিয়ম-বিরুদ্ধ। স্থানীয় রেজিস্ট্রি এবং ভূমি দফতরের ভূমিকা নিয়ে জেলা প্রশাসন তদন্ত করবে।”
ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই প্রায় ছ’বছর আগে জেলায় ৮টি নতুন সাবস্টেশন গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রস্তাবিত সেই ৮টি সাবস্টেশনেরই একটি হওয়ার কথা নন্দকুমার ব্লকের খঞ্চিতে। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন খঞ্চি মৌজায় এ জন্য ১.৭ একর (=১৭০ ডেসিমেল) জমি চিহ্নিত করেছিল বিদ্যুৎ দফতর ও জেলা পরিষদ। ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৮৯৪-এর জমি অধিগ্রহণ আইনেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয় ২০০৯-এর শেষ দিকে। জমি অধিগ্রহণে সহযোগিতার জন্য জমি-মালিকদের সঙ্গে আলোচনাও করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা। জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ জেলা ভূমি-অধিগ্রহণ দফতরকে ৬৫ লক্ষ টাকাও দিয়ে দেয় বিদ্যুৎ দফতর। ২০১১-র ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই জমি ‘সরকারি ভাবে’ অধিগৃহীতও হয়ে যায়। বিদ্যুৎ দফতর কাগজে-কলমে জমি পেলেও কার্যত কিন্তু হাতে পায়নি। গত জুনে মাটি পরীক্ষা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে তারা। সে সময়ে নিজেকে জমি-মালিক দাবি করে এক জন বাধা দেন। বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জমি-অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিয়ম-বিরুদ্ধ ভাবে একাংশ জমির হাতবদল হয়েছে। নতুন জমি-মালিক হিসাবে যিনি বাধা দিচ্ছেন, তাঁর হাতে অবশ্য রয়েছে ১৭০-এর মধ্যে ৫২ ডেসিমেল জমি। কিন্তু সেই বাধাতেই ফিরতে হয় বিদ্যুৎ-কর্মীদের।
থমকে যায় সাবস্টেশন গড়ার কাজও। জেলা গ্রামীণ বিদ্যুৎ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক কল্লোলকান্তি দাস বলেন, “অধিগৃহীত জমির একাংশ বিক্রি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা জেলা পরিষদ ও প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। জমির সমস্যার কারণে কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে সাবস্টেশন গড়ার প্রকল্প।” কিন্তু জমি-অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই কী ভাবে জমি বেচা-কেনা হল? কী ভাবেই তা রেজিস্ট্রি করা হল? জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকির বক্তব্য, “জমি-অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাঝে যদি অন্য কেউ জমি কেনেন, সেটা তাঁরই ভুল।” কিন্তু রেজিস্ট্রি দফতর কী করল? জেলাশাসকও এই প্রশ্নে নিরুত্তর। পটাশপুর ও নন্দকুমারে জটিলতা থাকলেও জেলার অন্য ৬ জায়গায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন গড়ার কাজ এগোচ্ছে বলেই জানিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। এর মধ্যে কাঁথি-৩ ব্লকের নাচিন্দা, কাঁথি-২ ব্লকের মুকুন্দপুর, রামনগর-২ ব্লকের জিনন্দপুর, এগরা-২ ব্লকের ভবানীচকে কন্ট্রোলরুম তৈরির কাজ চলছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের আমতলিয়া ও ভগবানপুর-২ ব্লকের উদবাদলে জমিতে সীমানা-প্রাচীর দেওয়া হচ্ছে। জেলায় গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজও এগোচ্ছে বলেই দাবি জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতির। এ জন্য রাজ্য সরকার অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন তহবিল (বিআরজিএফ) থেকে ৩৭ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ স্বপন রায় জানান, জেলার যে ব্লকগুলিতে নতুন বিপিএল তালিকা তৈরি হয়েছে, সেই তালিকা অনুসারেই এবং যে ব্লকগুলিতে নতুন তালিকা তৈরি হয়নি, সেখানে পুরনো তালিকা-মাফিক বিপিএল পরিবারগুলিতে বিদ্যুদয়নের কাজ চলবে। গ্রামীণ এলাকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলার ৫৬৫টি মৌজায় সমীক্ষার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে স্বপনবাবুর দাবি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.