উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
ব্রাহ্মসমাজ মন্দির
বিতর্কের কেন্দ্র
নিমতা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির ফলকের লেখাটি পরিচর্যার অভাবে অস্পষ্ট। ভেঙে পড়া দেওয়ালের অংশ, শালকাঠের কড়িবরগার গা থেকে খসে পড়া পলেস্তারায় ক্ষতচিহ্ন দেখানো প্রার্থনাগৃহের ছাদ দাবি করে, প্রায় দু’শো বছরের পুরনো এই ভবনের আশু সংস্কার প্রয়োজন। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং নিমতা এমবি রোডের চৌমাথার কাছে ফিকে লাল রঙের জরাজীর্ণ বাড়িটিকে সংরক্ষণের আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ১৪ কাঠা জমির উপর এই ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে বহু পুরনো একটি প্রাথমিক স্কুল চলত। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ওই স্কুলটি বছর কয়েক আগে পাশের একটি স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ওই জমিতে প্রমোটারি করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
১৮২৯ সালে মহেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় নিমতায় এই ব্রাহ্মসমাজ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছেলে ঈশানচন্দ্র সেটি সংস্কার করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর নামে ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরেই ঈশানচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত প্রার্থনাগৃহে ব্রাহ্মসঙ্গীত হত। ২০১১-য় ভবনটির ছাদ ভাঙা হলেও এই বছর ১লা জানুয়ারিতে ত্রিপল খাটিয়ে ওই ভাঙা ভবনের মধ্যেই অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকা এই ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে লোকজনের যাতায়াত কমে গেল।
বছর কয়েক ধরে ব্রাহ্মসমাজ মন্দির অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ করেছেন এখানকার ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় নিজেই। গৌতমবাবু অবশ্য প্রমোটারির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমার প্রপিতামহের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজ মন্দির আমি ব্রাহ্ম হয়ে প্রমোটারের হাতে তুলে দেব? এটা হাস্যকর। ভবনটির ভগ্নদশা এমন হয়েছিল যা সারানো সম্ভব নয়। তাই তা ভেঙে হুবহু আগের মতোই তৈরি করা হবে। তা ছাড়া এটা তো হেরিটেজ ভবন নয়, কী করব না করব তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে।’’ গৌতমবাবু জানান, কাজ শুরু করতে গিয়ে বাধা পাওয়ায় তিনি আদালতের দ্বারস্থও হন। আদালতের নির্দেশেই ভবনটি ভাঙার পরে ফের নতুন করে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হবে। নতুন ভবনে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
যদিও সুপরিচিত এই ব্রাহ্মসমাজ মন্দির ভাঙার কথা শুনে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, ‘‘এ রকম ভাবে কেউ ইচ্ছামতো ওই ভবন ভেঙে তাতে দাতব্য চিকিৎসালয় করতে পারেন না। বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ ভবন ভাঙার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে স্থানীয় উত্তর দমদম পুরসভাও। পুর-চেয়ারম্যান সুনীল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকে ওই ভবন ভাঙার কোনও অনুমতি আমি দিইনি। এমনকী, একটি পুকুরও আছে ওই ব্রাহ্মসমাজ মন্দির ট্রাস্টের। সেটি যাতে বোজানো না হয় সেই বিষয়েও গৌতমবাবুকে আগাম সতর্ক করেছি। পুরসভা ওই ভবন ভাঙার বিরুদ্ধে। অনুমতি না নিয়ে যদি তিনি কিছু করে থাকেন তা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.