উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বেহাল ট্রাফিক
ছবি বদলায় না
মিশনারেট তৈরির পরেও ট্রাফিক ব্যবস্থার ছবিটা বদলাল না। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পর পর ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কমিশনারেট গঠন হওয়ার পরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ট্রাফিক ব্যবস্থার সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা পূরণ হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিন মাসে ব্যারাকপুরে শিল্পাঞ্চলে পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে কুড়িটিরও বেশি। এর মধ্যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ঘোলার মুড়াগাছার কাছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ও সোদপুর-মধ্যমগ্রাম রোডের মোড়ে। ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন বিদ্যাভবনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শৌভিক পাল মায়ের সঙ্গে স্কুলবাসে উঠেছিল। চালকের পিছনের আসনে দু’জনে বসার পরেই দ্রুতগতিতে আসা একটি লরি বাসটিকে ধাক্কা মারে। জানলার ধারে বসা শৌভিক রক্তাক্ত অবস্থায় মায়ের কোলে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এর পরে স্থানীয় বাসিন্দারা এই মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, এই মোড়ে সিগন্যাল কাজ করে না।
শৌভিকের মৃত্যুর পরের দিন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতেই খড়দহ থানা এলাকার রুইয়ায় একটি বাঁকের কাছে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ব্যারাকপুরের বাসিন্দা মোটরবাইক আরোহী দুই তরুণের। গুরুতর জখম হন ওই গাড়ির চালক ও এক আরোহী। অভিযোগ, অন্ধকার এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এড়াতে রিফ্লেক্টর বোর্ড নেই। এর সপ্তাহখানেক আগে বিটি রোডে খড়দহ থানার কাছে সাইকেলআরোহী রামসুশীল সাউ-কে (১৪) লরি ধাক্কা মেরেছিল। হাসপাতালে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। তা ছাড়া, গত দু’মাসে বেলঘরিয়া অঞ্চলে চারটি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন চার জন।
অভিযোগ, এই অঞ্চলের বিটি রোড, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে বা ঘোষপাড়া রোডের মতো প্রধান সড়কগুলিতে ট্রাফিক সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। বেলঘরিয়া-বিরাটি রোড, গোপাললাল ঠাকুর রোড, ব্যারাকপুর সেন্ট্রাল রোড বা নীলগঞ্জ রোডের ট্রাফিক ব্যবস্থাও বেহাল। বহু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সব সময় ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। ফলে এই সব রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। তা ছাড়া শিল্পাঞ্চলের সব রাস্তাতেই গাড়ির চাপ বাড়ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এখনই ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং ব্যারাকপুর-বারাসত রোডের মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা সব সময় কাজ করে না। তা ছাড়া চালক নিয়ম ভাঙলেও পুলিশ অনেক সময়েই কিছু বলে না। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, এত বড় মোড়ে আইন ভেঙে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে গেল ধরা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া, ট্রাফিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে না পারলে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হবে না। সঙ্গে দরকার আইন মানার অভ্যাস।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা গ্রিন পুলিশ নিয়োগ করছি। এ রকম এক হাজার পুলিশকর্মী শিল্পাঞ্চলে ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলাবেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নিয়োগ হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও টহলদারি বেড়েছে। পদস্থ আধিকারিকেরাও রাস্তায় ঘুরছেন। যে সব জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.