দায় কার
ফাঁকির পার্কিং
রাতের পার্কিং থেকে গত কয়েক বছরে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আয় কমে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, রাতে অবৈধ পার্কিং বাড়ছে। জাল হচ্ছে পার্কিং স্টিকারও। যদিও এ ব্যাপারে পুরসভার কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। বরং, পুরসভার দুই বিভাগ একে অপরের উপরে দায় চাপিয়েছে। আর মেয়র জানিয়েছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।
মহাজাতি সদনের কাছে
পুরসভার সূত্রে খবর, ২০০৬-০৭ আর্থিক বছরে রাতে পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়ে পুরসভার আয় হয় প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা। কিন্তু, ২০১১-১২ অর্থবর্ষে সেই আয় কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৫১০ টাকায়। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রাতে পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করা রয়েছে। পুরসভা পার্কিংয়ের জন্য তিন ধরনের স্টিকার দেয়। বিভিন্ন সময়ের জন্য বিভিন্ন স্টিকার। রাতের পার্কিংয়ের জন্য লাগে ‘সি’ স্টিকার। ছোট চার চাকার গাড়ির জন্য এই স্টিকার পেতে মাসিক ৪০০ টাকা এবং বড় গাড়ির জন্য ৮০০ টাকা দিতে হয়। পুরসভা দরপত্র প্রকাশ করার পরে আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন জায়গার পার্কিংয়ের দায়িত্ব পায়। তা ছাড়া, গাড়ির মালিক তিন মাসের জন্য টাকা জমা দিয়ে রাতে পার্কিংয়ের স্টিকার সংগ্রহ করতে পারেন।
অভিযোগ, পার্কিংয়ের অনুমতি থেকে আয় কমে গেলেও রাতের পার্কিং কিন্তু কমেনি। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়াও অন্য জায়গায় বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে জাল পার্কিং স্টিকারও। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জাল স্টিকারের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। রাতের পার্কিংয়ে আয় কমে যাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এখনও আমায় কিছু জানানো হয়নি।”
সাদার্ন অ্যাভিনিউ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ
পাশাপাশি, জাল পার্কিং স্টিকার সম্পর্কে পুরসভার দু’টি বিভাগ একে অপরের উপরে দায় চাপিয়েছে। মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “রাতের পার্কিংয়ের বিষয়টি দেখার জন্য পুরসভার কনজারভেন্সি বিভাগের নিজস্ব লোক রয়েছে। ওরাই দেখাশোনা করে। জাল স্টিকারের বিষয়টিও ওদের দেখার কথা।” আবার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল ও বর্জ্য পদার্থ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “পার্কিংয়ের স্টিকার দেয় পুরসভার পার্কিং বিভাগ। সুতরাং, জাল স্টিকার এবং আইনি বা বেআইনি পার্কিং দেখার দায়িত্ব ওদেরই। ওরা জানালে আমরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে অভিযান চালাই। তবে এখন নিয়মিত অভিযান চালানো হয় না। মাঝেমধ্যে দু’-এক বার অভিযান চালানো হয়েছে।” যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বেআইনি পার্কিং প্রসঙ্গে বলেন, “পুরসভার সঙ্গে আমাদের কোনও যৌথ অভিযান হয়েছে বলে আমার জানা নেই। রাতের পার্কিং শুরু হয় রাত ১০টার পর থেকে। তখন ট্রাফিক বিভাগের কোনও কাজ থাকে না।”

রাতের পার্কিং থেকে পুর-আয় (টাকায়)
২০০৬-০৭ ৪১,৩১,৫১৫
২০০৭-০৮ ৩৭,০৬,৪০৯
২০০৮-০৯ ৩৪,৮০৩৭৯
২০০৯-১০ ২০,১৮৬৬৬
২০১০-১১ ১৬,২৮৩৫২
২০১১-১২ ১৬,২৭৫১০
রাতে বেআইনি পার্কিংয়ে জরিমানা (টাকায়)
মোটরবাইক বা তিন চাকার গাড়ি ৫০০
মিনিবাস, বেসরকারি বাস ৩০০০
লাক্সারি বাস ৩৫০০
লরি, ট্রেলার ৫৫০০

ছবি: রাজীব বসু ও শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.