দলবদলের জল্পনার মাঝে ক্লাব-প্র্যাক্টিসে সতীর্থের সঙ্গে মারামারি করে বিতর্কে জড়ালেন টোলগে ওজবে। মারপিটে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন লাল-হলুদের সতীর্থ গুরবিন্দর সিংহ। ইরাক-যাত্রার আগের দিন ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন হঠাৎই সরগরম টোলগের সঙ্গে গুরবিন্দরের হাতাহাতিতে। অন্য ফুটবলারদের সামনে দুই ফুটবলার মারামারি করলেন দু’বার। যা ময়দানে বিরল। বিশেষ করে বড় দলের অনুশীলনে।
মোহনবাগানে যাওয়ার খবরে টোলগের উপর চাপ রয়েছে, গুরবিন্দরও সামনের বছর ইস্টবেঙ্গলে থাকবেন কি না ঠিক নেই। মনে করা হচ্ছে, সেই চাপেরই বহিঃপ্রকাশ এই মারামারি। ক্লাব কর্তারা দুই ফুটবলারকে শাস্তি দিতে চান না। তবে মর্গ্যান সকালেই জরিমানা করতে চেয়েছিলেন। ২৫ হাজার টাকার জরিমানায় গুরবিন্দর রাজি হলেও টোলগে বলেন, এতটা জরিমানা দেওয়ার মতো দোষ তিনি করেননি। বিকালে দুই ফুটবলার ফের ক্লাব তাঁবুতে আসেন। তখন কর্তারা জরিমানা না করার কথা বলেন।
আজ শনিবারই ইরাক যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। তার আগের শেষ প্র্যাক্টিসে, শুক্রবার সকালে ইস্টবেঙ্গল মাঠে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলাচ্ছিলেন ব্রিটিশ কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। টোলগের বিপক্ষ দলে ছিলেন গুরবিন্দর। সেই ম্যাচ খেলার সময়েই ঘটে বিপত্তি। গুরবিন্দর টোলগেকে একটু জোরালো ট্যাকল করলে পড়ে যান অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎই গুরবিন্দরকে ধাক্কা দেন টোলগে। তাতেই মাথাগরম করে টোলগেকে আরও জোরে ঠেলে দেন গুরবিন্দর। কিছুক্ষণ হাতাহাতি হয় বক্সিংয়ের আদলে। |
ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি। টোলগে এর পর পঞ্জাবি স্টপারের পায়ে লাথি মারেন। ততক্ষণে দৌড়ে এসেছেন কয়েক জন সতীর্থ। হাতাহাতি করতে থাকা দু’জনকে ছাড়িয়ে নেন। মিটমাট করতে উদ্যত হন জনা কয়েক ফুটবলার ও সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী। দেখা গেল, মর্গ্যান তখন ঘটনাস্থল থেকে বেশ খানিকটা দূরে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে। ও দিকে টোলগে-গুরবিন্দরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পরও চলতে থাকে কথা কাটাকাটি। সবাইকে অবাক করে ফের দু’জনে শুরু করে দেন হাতাহাতি। মারামারি করতে করতে মাটিতে পড়ে যান দু’জন। যেন কুস্তি করছেন দুই ফুটবলার। তার পর দু’জনকেই শান্ত করেন ওপারা-বলজিৎরা।
এ বার দেখা যায়, মর্গ্যান হাঁটা লাগালেন ক্লাব তাঁবুর দিকে। ডেকে নেন টোলগে এবং গুরবিন্দরকে। ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে ভাষাগত সমস্যা মেটাতে গুরবিন্দরের সঙ্গে যান বলজিৎ সিংহ। দরজা বন্ধ রেখে মর্গ্যান কথা বলেন টোলগে-গুরবিন্দরের সঙ্গে। যা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মর্গ্যান। সেখানে হাজির বৈদ্যুতিন মিডিয়ার কাছে অনুরোধ করেন, “খবরটা আপনারা জানাতে পারেন। কিন্তু মারামারির ছবি টিভিতে দেখাবেন না।” তার পরই বলেন, “যদি কেউ টিভিতে দেখান সেই চ্যানেলকে পরের দিন প্র্যাক্টিসে ঢুকতে দেব না।” মারপিটের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মর্গ্যান বলেন, “এ রকম ঘটনা বিশ্বের সব ক্লাবে ঘটে। সে রকম বড় কিছু নয়।” ঘটনার বিবরণ লিখে এই মর্মেই মর্গ্যান ই-মেল করেন ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যকে। যা দেখার পর সন্তোষ বলেন, “আমি কোচের সঙ্গে একমত। ওদের শাস্তি দেওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। কোচ আমাকে জানিয়েছে, তাঁর সামনেই টোলগে-গুরবিন্দরের মধ্যে মিটমাট হয়ে গেছে।”
শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রশ্ন অবশ্য উড়িয়ে দিলেন ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদারও। তাঁর কথায়, “অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেও তো মাঝেমাঝে গণ্ডগোল হয়। এখানেও তার থেকে বেশি কিছু দেখছি না। কোনও শাস্তি ওদেরকে দেওয়া হবে না।” এ দিকে টোলগে-গুরবিন্দরের হাতাহাতির আগে ফের ধাক্কা খেল লাল-হলুদ রক্ষণ। গুরবিন্দরের ট্যাকলেই ফের পায়ে চোট পান রাজু গায়কোয়াড়। তাঁকে তখনই স্ক্যান করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্সে। রাজু এখন সুস্থ, কিন্তু টোলগে-গুরবিন্দরের হাতাহাতিতে ক্ষত হয়ে রইল ইস্টবেঙ্গল। |