সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। ফোনও ধরছিলেন না। হিসেব উল্টে দেওয়া এমন অবিস্মরণীয় ম্যাচ জয়ের পরেও যেন নির্লিপ্ত। রাতে হোটেলের একুশ তলার ঘরে বসে পরের প্রতিপক্ষ পঞ্জাবকে টিভিতে মাপছিলেন। সেই সময়ই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, আপনার স্ক্রিপ্ট কে লেখেন?
সৌরভ: (হাসি) উপরওয়ালা।
প্র: মনে হয় উপরওয়ালারও সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটাররা লেখেন।
সৌরভ: কেন?
প্র: কারণ এ তো উপন্যাসেও হয় না যে, এক বছর আগে নিলামে বাতিল একটা লোক। যার আইপিএলে প্লেয়ার হিসেবে ঢোকার রাস্তাই খোলা নেই, সে কিনা আচমকা ক্যাপ্টেন বনে মুম্বইয়ের মাঠে মুম্বইকে হারিয়ে দিয়ে গেল?
সৌরভ: আশ্চর্য কি না জানি না। তবে নিলামে না নেওয়াটা খুব অন্যায় হয়েছিল। যে লোকটা আগের মরসুমে পাঁচশোর ওপর রান করেছে, যে একটা সময় কালিস আর সচিনের সঙ্গে হায়েস্ট স্কোরার হওয়ার দৌড়ে ছিল, তাকে একটাও ফ্র্যাঞ্চাইজি নেবে না এটা অত্যন্ত অন্যায্য।
প্র: রাজনীতি ছিল বলছেন?
সৌরভ: রাজনীতি ছিল কি না অতশত জানি না, তবে ক্রিকেটীয় যুক্তি ছিল না।
প্র: আচ্ছা, আজকে জেতার পর প্রেস কনফারেন্সে এলেন না কেন? জাতীয় মিডিয়া তো আপনাকে খুঁজছিল?
সৌরভ: এলাম না, কাল তো গিয়েছিলাম। আজকে স্টিভ স্মিথকে পাঠিয়ে দিলাম। ও-ই তো ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
প্র: কিন্তু মানুষের চোখে ম্যাচের রং বদলে দিয়েছে আপনার অধিনায়কত্ব।
সৌরভ: তাই? |
প্র: আপনি জানেন না? এসএমএস পাচ্ছেন না?
সৌরভ: ওই যারা এসএমএস করে তারা।
প্র: কেকেআর থেকে কেউ এসএমএস করেছিল?
সৌরভ: আবার কেকেআরকে এর মধ্যে নিয়ে এলেন কেন?
প্র: না, এমনিই জানতে চাইছি।
সৌরভ: (একটু চুপ থেকে) না, কেকেআর থেকে কেউ করেনি।
প্র: কাল রাত্তিরে কেকেআরের ম্যাচটা দেখলেন? কী ভাবে হারল?
সৌরভ: লাস্ট দিকটা দেখেছি। কিন্তু আর প্লিজ কেকেআর নয়। "
প্র: আপনি জানেন হরভজন সিংহ সাংবাদিক সম্মেলনে আপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন?
সৌরভ: তাই বুঝি? ভাজ্জি পাগলা আবার কী বলল?
প্র: ভাজ্জি বলেছেন, আজ আবার প্রমাণ হয়ে গেল আপনিই সর্বকালের সেরা ভারত অধিনায়ক। আর বলেছেন, পুণের মনোভাব দেখে তাদের সেই ২০০১-এর ভারতীয় দল মনে পড়ে যাচ্ছিল। যখন নামগোত্রহীন তাদের এক-এক জনকে ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি সাহস জুগিয়ে বড় ক্রিকেটার বানাচ্ছিলেন।
সৌরভ: আমি এখানে ভাজ্জির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। পুণের তুলনায় ওই টিমটার ট্যালেন্ট অনেক বেশি ছিল। কী কী সব প্লেয়ার ছিল সেই দলে!
প্র: মুরলী কার্তিক কিন্তু আজ আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিয়েছেন।
সৌরভ: (হাসি) হ্যাঁ, মুরলী দারুণ বল করেছে।
প্র: রিচার্ড লেভির জন্যে শুরুতেই মুরলীকে আনবেন কখন ঠিক করলেন?
সৌরভ: আমি জানতাম লোকে ওকে নিয়ে এত কথা বলছে, কিন্তু যেখানে বল ঘুরছে সেখানে স্পিনার খেলা ওর প্রবলেম হবে।
প্র: মাত্র ১২৯ হাতে নিয়ে তা হলে হাল ছাড়েননি।
সৌরভ: একদমই না। আমি জানতাম যে ভাবে বল ঘুরছে, আমাদের আশা থাকছে।
প্র: তা হলে কি হরভজনের টস জিতে আগে ব্যাট করা উচিত ছিল?
সৌরভ: আমার তাই মনে হয়। আমি তো টস জিতলে আগে ব্যাট করতাম। |
প্র: আর দিন্দা?
সৌরভ: দিন্দা অনবদ্য। আমি বেশ কিছু দিন ধরে বলে আসছি এখন ও যে ফর্মে বল করছে, তাতে ধারাবাহিক ওকে ইন্ডিয়ান টিমে খেলিয়ে যাওয়া উচিত।
প্র: আজ দেখা গেল একই সঙ্গে আপনি আরও দুই ‘অধিনায়ক’-কে ফিল্ড প্লেস করতে দিচ্ছেন। কিপার উথাপ্পা এক দিকটা করছিলেন। মুরলী বল করার সময় লং-এ ফিল্ডার সাজাচ্ছিলেন। আবার আপনিও সাজাচ্ছিলেন। যাকে বলে মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্সি।
সৌরভ: আসলে ওরা কখনও কখনও অ্যাঙ্গেলগুলো ঠিক করছিল। বিশেষ করে উথাপ্পা। টি-টোয়েন্টিতে সারাক্ষণ এত চিৎকার চলে যে, অনেক সময় ক্যাপ্টেন জোরে বললেও ফিল্ডার শুনতে পায় না। তাই অন্যদের সুযোগ দিলে ভালই।
প্র: আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে কি এটাই সেরা জয়? না কি ইডেনে সেই শোয়েব নিয়ে দিল্লিকে হারানো?
সৌরভ: আমার মনে হয় আইপিএলে ক্যাপ্টেন হিসেবে এটাই আমার সেরা জয়। দিল্লির সেই টিমটার তুলনায় মুম্বই অনেক স্ট্রং। তার পর ওদের মাঠে এসে।
প্র: শুক্রবারের পর পুণে সম্পর্কে অনেকেই খুব আশাবাদী হয়ে পড়ছেন।
সৌরভ: এখনও কিছুই হয়নি। সবে তো শুরু। অনেক দূর যেতে হবে। তবে মুম্বইটা খুব শক্ত গাঁট ছিল।
|