চওড়া হয়েছে উলুবেড়িয়ার প্রধান সড়ক ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড। ৫ মিটার চওড়া এই রাস্তা এখন প্রায় ৭ মিটার চওড়া। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে শহরের ফুটপাথ। বাতিস্তম্ভগুলি না সরানোয় বেড়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করে উলুবেড়িয়া কোর্ট থেকে গঙ্গারামপুর পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও প্রকট হয়েছে।
এলাকার প্রবীন নাগরিক বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় বহু বছর ধরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোন। তাঁর কথায়, “আগে নিশ্চিন্তে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যেত। কিন্তু এখন রাস্তার ধার বলে আর কিছু অবশিষ্ট রইল না। ফলে হাঁটতে ভয় হয়, এই বুঝি কোনও গাড়ি পিছন থেকে এসে ধাক্কা দিল।” |
সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত স্কুল ও অফিসের ভিড় থাকায় এই রাস্তা দিয়ে ভারি যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হত না। কিন্তু ইদানীং তেমন কোনও নিয়ম নেই। রাস্তা চওড়া হওয়ার পরে তাদের গতিও বেড়েছে। রাস্তার মাঝে বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটিগুলি না সরানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল। অভিভাবকদের কেউ কেউ জানালেন, ছেলেমেয়েরা আগে সাইকেলে স্কুলে যেত। এখন রাস্তায় বিপদের আশঙ্কা বাড়ায় বাসে করেই নিয়মিত এখন তাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ বলেন, “রাস্তা চওড়া করে লাভ বিশেষ কিছু হয়নি। বরং ফুটপাথহীন এই রাস্তায় পথচারীরা যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। যত দিন না মেদিনীপুর খাল বরাবর বাইপাস রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তত দিন শহরে যানজটও থাকবে। তবে ফুটপাথের সমস্যা নিয়ে শীঘ্রই পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।” রাস্তা চওড়া করার দায়িত্ব ছিল পূর্ত দফতর (সড়ক) বিভাগের। পুরসভা এবং পূর্ত দফতর বসে ফুটপাথের সমস্যা মিটিয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দনও।
পূর্ত দফতর (সড়ক) বিভাগের উলুবেড়িয়া শাখার আধিকারিক বিষ্ণু সামন্ত বলেন, “রাস্তার উপরে যে সব বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি আছে, তা সরিয়ে ফেলা হবে। সংশ্লিষ্ট দু’টি দফতরের কাছে আমরা ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছি।”
পূর্ত আধিকারিক জানান, ফুটপাথ তৈরির জন্য রাস্তার দু’পাশে ১০৯টি গাছ কাটা পড়বে। কিন্তু রাস্তা তৈরির পরে খুঁটি সরানো হবে কী ভাবে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট উত্তর দেননি বিষ্ণুবাবু। তবে দফতর সূত্রের খবর, গত অর্থবর্ষের টাকা খরচ করতে না পারলে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই কিছুটা তড়িঘড়ি কাজ সারা হয়েছে। টেলিফোন দফতরের উলুবেড়িয়া শাখার আধিকারিক এস সেনাপতি এ ব্যাপারে বলেন, “মাত্র এক মাস আগে পূর্ত দফতরের কাছ থেকে খুঁটি সরানোর ব্যাপারে চিঠি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে যে খুঁটি পোঁতা আছে, সেগুলি এত দ্রুত সরিয়ে ফেলা অসম্ভব। এমনিতেই রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে মাটির নীচের কেব্ল লাইনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে এই খুঁটি অবিলম্বে সরাতে গেলে বহু গ্রাহকের পরিষেবা বিঘ্নিত হবে।” |