সরকার শর্ত মানলেও বেঁকে বসল মাওবাদীরা। ফলে অপহৃত ইতালীয় পাওলো বোসুস্কোর মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে জটিলতা বাড়ল। একই সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল অপহৃত বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকার ভাগ্যও।
বৃহস্পতিবারই ওড়িশা সরকার মাওবাদীদের শর্ত মেনে নিয়ে জানিয়েছিল, আট মাওবাদী-সহ ২৭ জন জেলবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু শুক্রবার মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডা সেই পদক্ষেপকে ‘হাস্যকর’ বলে ব্যাখ্যা করে দাবি করেন, ওই তালিকা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ওই মাওবাদী নেতার হুমকি, অপহৃতদের মুক্তির জন্য ৯৬ ঘণ্টার ‘চরম সময়সীমা’ দেওয়া হল নবীন পট্টনায়ক সরকারকে। এর মধ্যে সরকার লিখিত চুক্তির মাধ্যমে মাওবাদীদের শর্ত ‘যথাযথ ভাবে’ না-মানলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বোসুস্কোর ভাগ্য কী হতে চলেছে, তা জানতে ওড়িশার মুখ্যসচিব বি কে পট্টনায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত গিয়াকোমো সানফেলিস। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, সব্যসাচীর ‘বার্তা’ খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে একটি ‘অডিও’ বার্তা পাঠান মাওবাদী নেতা সব্যসাচী। সেখানেই তিনি দাবি করেন, তাঁরা যে সাত জন মাওবাদীর মুক্তি চাইছেন, সরকারের তালিকায় তাদের সকলের নাম নেই। তাই ওই তালিকা তাঁরা মানছেন না। সব্যসাচীর যুক্তি, মাওবাদীদের ১৩টি শর্ত নিয়েও সরকার স্পষ্ট কিছু জানায়নি। সরকারকে লিখিত চুক্তি করে জানাতে হবে, মাওবাদীদের দেওয়া সব শর্ত মানতে তারা রাজি। একই সঙ্গে ওই মাওবাদী নেতার অভিযোগ, পাওলো বোসুস্কোর মুক্তি নিয়ে ভাবার বদলে বিধায়ক অপহরণের ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। |
পাওলো বোসুস্কো।-ফাইল চিত্র |
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সরকারের মুক্তি তালিকায় সব্যসাচীর দাবি মেনে তাঁর স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী শুভশ্রী-সহ চার মাওবাদীর নাম রয়েছে। তার পরেও সব্যসাচীর দাবি, বোসুস্কোকে ছাড়াতে সরকার কী করছে বোঝা যাচ্ছে না। শুক্রবার সকালেই বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই মধ্যস্থতাকারী বি ডি মিশ্র এবং দণ্ডপাণি মহান্তির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। সেই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাওবাদীদের এই নতুন শর্তে কিছুটা দিশাহারা ওড়িশা সরকার। এ দিকে মাওবাদীদের অন্য যে গোষ্ঠী বিজেডি বিধায়ক হিকাকাকে অপহরণ করেছে, তাদের তরফে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই জানানো হয়নি। ওই গোষ্ঠীর দেওয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে শনিবার, ৭ এপ্রিল। ফলে হিকাকার মুক্তি নিয়েও কিছুটা চিন্তিত সরকারি কর্তারা।
এর মধ্যেই অপহরণ কাণ্ডে ওড়িশা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য সরকার যে ভাবে মাওবাদীদের শর্ত মেনে নিচ্ছে, তাতে মন্ত্রকের কর্তারা খুশি নন। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও ওড়িশা সরকার মাওবাদীদের কাছে বার বার ‘আত্মসমর্পণ’ করায় প্রশাসনের দুর্বলতাই প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। একই কথা মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশকর্মীরাও। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি স্বর্ণজিৎ সেন এ দিন বলেন, ইতিহাস থেকে কোনও শিক্ষাই নেওয়া হয়নি। তাই একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। মাওবাদী দমনে কড়া ভূমিকা নিতে ব্যর্থ নবীন পট্টনায়ক। এ ভাবে অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে দেশের মাওবাদী সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে মানতে নারাজ তিনি। |