লক্ষ্য ছিল, বিধানসভায় ভাল ফল করা। দিনের শেষে অঙ্কের হিসেবে ভোটের হার তুলনামূলক বাড়লেও সেই অনুপাতে আসন বাড়েনি। ভোটের ফল বিশ্লেষণের বৈঠকে বসে রাহুল গাঁধী বুঝতে পারলেন, দলের এ বার ভাল ফল করার সুযোগ থাকলেও কিছু নেতার জন্যই তা সম্ভব হয়নি। আমজনতার সঙ্গে নেতাদের মেলামেশা ঠিক হলে, সংগঠন পরিচালনার কাজ ঠিকঠাক হলে এ বার ফল অনেকই ভাল হতে পারত। একেবারে নিচু স্তরের নেতা-কর্মীদের থেকে এ কথা জানার পরেই তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ভরাডুবির জন্য দায়ী নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এ বার দল ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেবে।
উত্তরপ্রদেশের ফল প্রকাশের ঠিক এক মাসের মাথায় ময়না-তদন্তে বসলেন রাহুল। সেই বৈঠকে রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতা, উত্তরপ্রদেশ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় নেতারা। তাঁরা অসন্তোষ জানান উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহের বিরুদ্ধেও। বিধায়ক ও নিচু তলার নেতাদের অভিযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য এই সব ‘বড়’ নেতারাই দায়ী। প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়লেও এঁদের জন্যই আসন বাড়েনি।
পরে উত্তরপ্রদেশ থেকে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের সঙ্গেও কথা বলেন রাহুল। সূত্রের খবর, সেখানে তিনি মন্ত্রী ও সাংসদদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তুলে ধরেন। ইঙ্গিত দেন, উত্তরপ্রদেশে সংগঠনকে মজবুত করতে তিনি সাংগঠনিক রদবদল করতে পারেন। তা ছাড়া কোনও সাংসদ যদি তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রে সংগঠন বাড়াতে সক্রিয় না হন, তা হলে লোকসভা ভোটে তাঁকে ফের টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা-ও বিবেচনা করে দেখা হবে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা পরে জানান, উত্তরপ্রদেশের নিচু স্তরের নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা নিজেদের কেন্দ্রেই যান না। রাজ্য স্তরে কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করতে চান না। তাঁদের আচরণ ‘রাজা-মহারাজার’ মতো। স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি দিগ্বিজয়ও। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ, দিগ্বিজয় দিল্লি থেকে লখনউ পৌঁছেই জানাতেন, তাঁর ফেরার বিমানের সময় কখন! ব্লক স্তর তো বটেই, রাজ্য স্তরের কোনও নেতার সঙ্গেও সে ভাবে মিশতেন না। রাহুলের সামনেই উত্তরপ্রদেশের নেতারা জানান, রাজ্যে কংগ্রেসের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যেন এখন থেকে মাটিতে নেমে রাজনীতি করেন!
উত্তরপ্রদেশ ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট, মায়াবতী-বিরোধী ভোটের সিংহভাগই গিয়েছে সপা-র ঝুলিতে। ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিরোধীরা রাহুলের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হলেও অনেকেই মনে করেন, রাহুল সেই অর্থে ব্যর্থ নন। তাঁদের বক্তব্য, রাহুলের হাত ধরেই রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ৬%। অথচ আসন বেড়েছে মাত্র ছয়টি! অথচ সপা-র ভোটের হার সাড়ে তিন শতাংশ বাড়লেও আসন বেড়েছে ১২৭টি। এর পাশাপাশি আরও একটি দিক রয়েছে। তা হল, ভোটের ফল যা-ই হোক, রাহুল যে অখিলেশের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়, তার প্রমাণ মিলেছে সব সমীক্ষাতেই। এই হিসেবটাও মাথায় রাখছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সংগঠন ঠিক রাখতে পারলে এই সব হিসেবই লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে অন্য রকম ফল দিতে পারে। কিন্তু তার আগে দরকার দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করা।
এ দিন উত্তরপ্রদেশের নেতা-বিধায়কদের সব অভিযোগ শোনেন রাহুল। যাঁদের জন্য রাজ্যে দলের ফল ভাল হয়নি, তাঁদের যে সহজে ছাড়া হবে না, তার ইঙ্গিত এ দিন বৈঠকেই দেন রাহুল। বিধায়ক ও নিচুস্তরের নেতাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “দোষীদের এ বার নরম হাতে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। কেন না সপা, বসপা যখন তাদের প্রার্থীদের জেতাতে সচেষ্ট ছিল, তখন কংগ্রেসেরই একাংশ নিজেদের প্রার্থীকে হারানোর জন্য সচেষ্ট ছিল বলে জানতে পেরেছি।” |