বত্রিশ বছর পূর্ণ হল বিজেপির। এবং দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করতে গিয়ে সব নেতারাই সামনে নিয়ে এলেন যথারীতি সেই অটলবিহারী বাজপেয়ীকে। জাতপাত-ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণির কাছে সমানভাবে যিনি জনপ্রিয়, যাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেন না। কিন্তু সেই সুর কেটে দিয়ে বাজপেয়ী সরকারেরই প্রাক্তন মন্ত্রী সঙ্ঘপ্রিয় গৌতম কার্যত প্রশ্ন তুললেন, সর্বজনপ্রিয় নেতাকে সামনে তুলে ধরলেও তাঁর নীতি-আদর্শ দল আদতে কতটা পালন করছে?
দিল্লিতে দলের সদর দফতরে, প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে তখন নিতিন গডকড়ী, প্রাক্তন সভাপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, দিল্লি প্রদেশ সভাপতি বিজেন্দ্র গুপ্ত, বিজয় গোয়েলের মতো নেতারা। সেই সময় দর্শক আসন থেকে উঠে, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই প্রবীণ নেতা গৌতম প্রশ্ন তোলেন, “দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হচ্ছে, অথচ মঞ্চে একজন মহিলা নেই, দলিত নেই, সংখ্যালঘুর প্রতিনিধি নেই কেন?” |
দলে বিদ্রোহ দেখিয়ে উমা ভারতীকে যখন বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই সময় এই ‘অগ্নিকন্যা’র পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গৌতম। রামলীলা ময়দানে উমার সভায় যোগ দেওয়ায় তাঁকেও দল ছাড়তে হয়েছিল। গত বছর উমাকে ফের বিজেপিতে ফিরিয়ে আনার পর প্রবীণ এই নেতাকেও দলে আনা হয়। তাঁকে সম্মান জানাতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যও করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বিজেপিতে তাঁর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই, কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও নেই। কিন্তু সকলের সামনে যে প্রশ্নটি তিনি তুলেছেন, তাতে অস্বস্তির মুখে দলের নেতারা। কোনও ভাবে তাঁকে সেই সময় শান্ত করা হয়। কিন্তু বিজেপি শিবিরে এই মন্তব্যে শোরগোল পড়ে যায়। দলের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “খুব ভুল বলেননি সঙ্ঘপ্রিয় গৌতম। এত বছর হয়ে গেল, এখনও সংগঠনের সিংহভাগ দখল করে বসে রয়েছেন উচ্চ বর্ণের নেতারা। গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী কিংবা মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহানের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন ঠিকই। কিন্তু সংগঠনের চেহারা এখনও বদলায়নি।”
গডকড়ী যে ভাবে দল ও সংগঠন চালাচ্ছেন, তা নিয়েও অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে গডকড়ীর কৌশল নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। উত্তরপ্রদেশে উমা ভারতীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চেয়েছিলেন আডবাণী। গডকড়ী সেটিও করতে পারেননি। দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও যে বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে নিয়ে এসেছিলেন গডকড়ী, তিনি একটি আসনও বিজেপির ঝুলিতে আনতে পারেননি। বরং উমা ভারতী মধ্যপ্রদেশ থেকে এসে উত্তরপ্রদেশে প্রথম বার ভোটে লড়ে দলের মধ্যে রেকর্ড মার্জিনে জিতেছেন। বুন্দেলখণ্ড থেকে তিনটি আসন (আগে বিজেপির আসন ছিল না ওই অঞ্চলে) নিয়ে এসেছেন। ফলে গৌতম আজ যা বলেছেন, তা দলের অনেকের মনোভাবের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
দল অবশ্য প্রকাশ্যে সঙ্ঘপ্রিয়র এই মন্তব্যকে তেমন আমল দিতে চাইছে না। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অতীতেও দলের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন সঙ্ঘপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও মুলায়ম সিংহকে হারানোর জন্য মায়াবতীর সঙ্গে জোট বাধার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি। বিজেপি কংগ্রেসের মতো নয়, যে শুধু এক পরিবারের শাসন চলবে। বিজেপি গণতান্ত্রিক দল। সকলেরই মত রাখার স্বাধীনতা রয়েছে।” |