রাবার চাষ নিয়ে জট, বন্ধ বিনোদিনী চা-বাগান
পাঁচ মাস ধরে কাজকর্ম বন্ধ লেম্বুছড়ার বিনোদিনী চা বাগানে। চা বাগানের ৮০ জন কর্মী চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও এই চা বাগানে অচলাবস্থা কাটেনি। মালিক পক্ষের বক্তব্য, আগাম কিছু না জানিয়েই গত বছর ২৫ অক্টোবর থেকে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। চিঠি দিয়েও কাজে ফেরানো যায়নি তাঁদের। অচলাবস্থা দূর করতে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে শ্রম দফতরকে। অন্য দিকে শ্রমিকদের স্বার্থে যৌথ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএনটিইউসি ও সিটু। ত্রিপুরায় শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে যা ‘নতুন ঘটনা’। তবে এই ‘যৌথ আন্দোলনের’ পিছনে ‘প্রকৃত’ শ্রমিক স্বার্থ কতখানি, তা নিয়ে সংশয়িত বাগান শ্রমিকদের একটা বড় অংশ।
কিন্তু কেন বন্ধ আগরতলা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দুরে লেম্বুছড়ার এই চা বাগান? শ্রমিকরাই বা কী বলছেন? বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, চা বাগানের ‘খালি’ কিছুটা অংশে রাবার চাষ নিয়েই জটিলতার সূত্রপাত। বিনোদিনী চা বাগানের কর্মী ভূপেন তাঁতি, পরিমল ভিল, অরুণ চালিয়ারা জানিয়ে দেন, এই চা বাগানে যে অংশে রাবার চাষ করা হচ্ছে, সেখানে তাঁরা আর কাজ করবেন না। তাঁরা শুধু চা-বাগান অংশেই কাজ করতে রাজি। আইএনটিইউসি নেতা নেতা নীরদবরণ দাসের বক্তব্য, চা বাগানে রাবার চাষ করাটাই ‘বেআইনি’। শ্রমিকেরা ‘বেআইনি’ রাবার বাগানে কাজ করতে রাজি নন। আর সিটু সমর্থিত ত্রিপুরা টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি পানু মজুমদারের দাবি, বিনোদিনী চা বাগানে রাবার চাষের উদ্যোগে প্রথম দিকেই বাধা দিয়েছিল সিটু। কিন্তু আইএনটিইউসি সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়ন সে সময় সক্রিয় ভাবে বিরোধিতা করেনি। তবে ‘শ্রমিক স্বার্থে’ এখন বাম-ডান দুই শ্রমিক সংগঠনই যৌথ আন্দোলনে রাজি।
মালিক পক্ষ বাগান বন্ধ থাকার দায়টা শ্রমিকদের ঘাড়েই চাপাতে চান। বিনোদিনী চা-বাগানের মালিক কলকাতার এস আর পি কোম্পানির প্রতিনিধি তারাভূষণ সাহার অভিযোগ, গত বছর ২৫ অক্টোবর তারিখ থেকে কোনও ‘নোটিস ছাড়াই’ শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন বাগানে। ওই কোম্পানি ২০০৭ সালে চা-বাগানটি কিনেছিল। ৫৩১ একর এলাকা জুড়ে থাকা এই বাগানের ৩০ একর জমিতে চা চাষ হয়। বাগানের বাকি ‘খালি’ জমিতে রাবার গাছ লাগানো শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকেই। তখন কিন্তু কোনও গোলমাল হয়নি।
তা হলে, পাঁচ বছর বাদে এই বাগানে ‘শ্রমিক অসন্তোষ’ কেন তার সদুত্তর কোনও পক্ষের কাছেই নেই। বিষয়টি ত্রিপুরার শ্রম কমিশনার পর্যন্ত গড়িয়েছে। শ্রম কমিশনার পি কে চক্রবর্তী বলেন, শ্রম দফতর একাধিক ‘শো কজ’ নোটিসও জারি করেছে বাগানের মালিকপক্ষকে। যদিও তারাভূষণবাবুর গাবি , সরকার থেকে মাত্র একটি ‘শো কজ’ নোটিস পেয়েছে কোম্পানি। তার জবাবও দেওয়া হয়েছে।
বিনোদিনী চা কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ত্রিপুরা ল্যান্ড রেভিনিউ অ্যান্ড ল্যান্ড রিফমর্স অ্যাক্ট, ১৯৬০-এর ২০ নম্বর ধারায় পরিষ্কার উল্লেখ করা রয়েছে, ‘কৃষিজ উৎপাদন’ ছাড়া ‘নির্দিষ্ট জমিতে অন্য কিছু’ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি আবশ্যক। চা, রাবার, কফি, সিনকোনা ইত্যাদি যে ‘কৃষিজ উৎপাদন’-এর আওতায় পড়ে, তা স্বীকারও করেছেন ত্রিপুরা সরকারের এলআর দফতরের প্রধান সচিব জি কে রাও। কিন্তু শ্রমমন্ত্রী মানিক দে বলেন, ‘‘চা বাগানে রাবার চাষ করলে, চা বাগানটি উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরকারও তাই চা বাগানে রাবার চাষে উৎসাহ দেয় না।’
সচিব জি কে রাও-এর কথায়, ত্রিপুরায় চা বাগানগুলির মোট জমির পরিমাণ ২৯,১৫৬ একর। তার ৭০ শতাংশ জমি খালি পড়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও, চা বাগানের ‘খালি’ জমিতে রাবার বাগিচা করা ‘বেআইনি’, এ কথা ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা সহ কোনও কোনও মন্ত্রীও বলছেন। শিল্পমহলের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে বাগিচা শিল্পের প্রসারের পরিবর্তে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
শ্রম কমিশনার জানান, বিনোদিনী চা বাগান নিয়ে বহু বার ‘ত্রিপাক্ষিক’ মিটিং হয়েছে মালিকপক্ষ এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধের সঙ্গে নিয়ে। আলোচনা ফলপ্রসু না হওয়ায় বিষয়টি শ্রম আদালতে পাঠানো হয়েছে সম্প্রতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.