বিদেশ থেকে জ্বালানি আনলে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে এয়ার ইন্ডিয়া! অর্থাৎ বছরে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি! যে ভয়ঙ্কর আর্থিক সঙ্কটের মুখে এখন এয়ার ইন্ডিয়া দাঁড়িয়ে, এই টাকায় তাদের অনেক সমস্যা দূর হতে পারে। সরকারের ছাড়পত্র পেয়ে তারা তাই এ বার জ্বালানি আমদানির তোড়জোড়ই শুরু করছে।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন তেল সংস্থার কাছ থেকে এয়ার ইন্ডিয়া রোজ ২৩ কোটি টাকার জ্বালানি (এভিয়েশন ফুয়েল) কেনে। তাদের ১৩৮টি বিমান এই জ্বালানি ভরে যাত্রী ও মাল নিয়ে সারা দিন দেশে-বিদেশে উড়ে বেড়ায়। এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তারা হিসেব কষে দেখেছে, জ্বালানি আমদানি করলে এই খাতে তাদের খরচ ১০-১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তারা বলছেন, জ্বালানি-র দাম এতটাই বেড়েছে যে বিমান চালানোর মোট খরচের ৬০ শতাংশই চলে যাচ্ছে জ্বালানি কিনতে। জ্বালানির উপরে কেন্দ্র যেমন কর নেয়, কর নেয় রাজ্যও। এক-একটি রাজ্যে এই করের হার ভিন্ন। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম ও করের বোঝার জন্য ভারতের বেশির ভাগ বিমান সংস্থাই লোকসানে চলছে। হিসেব দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ২০১০-১১ আর্থিক বছরে তাদের জ্বালানি কিনতে খরচ হয়েছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। আর প্রায় সম পরিমান জ্বালানি কিনতে চলতি আর্থিক বছরে খরচ হয়েছে ৮০০০ কোটি টাকা।
বিমান সংস্থাগুলিকে সম্প্রতি বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানির অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা কিংফিশার এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এয়ার ইন্ডিয়াও এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগী হতে চাইছে। জ্বালানি আমদানির বিষয়ে গত সপ্তাহে বিমান সংস্থার বোর্ড মিটিং-এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “ঠিক হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া নিজের নামেই জ্বালানি আমদানি করবে। এর জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)-র কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” কোন দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করা হবে, তা অবশ্য লাইসেন্স পাওয়ার পরেই ঠিক করা হবে।
সংস্থা সূত্রে খবর, তাদের ১৩৮টি বিমান মোট জ্বালানির প্রায় ৮০ শতাংশই নেয় দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরু থেকে। ফলে, ঠিক হয়েছে বিদেশ থেকে আনা জ্বালানি কোনও ভাবে এই ৬টি শহরে পৌঁছে দেওয়া হবে। বিদেশ থেকে জ্বালানি আসবে জাহাজে। তা দেশে এনে মজুত করা, সেখান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বিমানে জ্বালানি ভরার মতো কাজ তেল সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে দিয়েই করাতে চায় এয়ার ইন্ডিয়া। কারণ, এই ধরনের কাজের পরিকাঠামো তাদের নেই। এ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হবে। চেন্নাই, মুম্বই এবং কলকাতায় বন্দর রয়েছে। তাই, আর দুই শহরের সঙ্গে কলকাতাও তেল আমদানির পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। |